লভ্যাংশ ঘোষণার আগে পতনের শীর্ষে সিটি ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গতকাল শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। লভ্যাংশ ঘোষণার আগে গতকাল শেয়ারটির দর কমে ডিএসইর দরপতনের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) কাছে শেয়ার বিক্রির খবরে বেশ কিছুদিন টানা বাড়তে থাকে সিটি ব্যাংকের শেয়ারদর। গত মঙ্গলবার শেয়ার বিক্রির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গত দুদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে। কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়নের কারণে এখন দর কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যমতে, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আইএফসির কাছে প্রায় ৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যুর চুক্তি করে সিটি ব্যাংক। চুক্তি অনুযায়ী, আইএফসিকে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২৩১টি নতুন শেয়ার দিয়ে মোট ১৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ইক্যুইটি বিনিয়োগ পাবে সিটি ব্যাংক। প্রতিটি শেয়ারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সা। পাশাপাশি আইএফসির কাছ থেকে ২ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে ব্যাংকটি। এজন্য শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করা হয়। বিএসইসি বিষয়টি অনুমোদন করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক চুক্তির কিছু বিষয় সংশোধনের নির্দেশ দেয়। সংশোধনের পর গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে সম্মতি দেয়। এতে সিটি ব্যাংকের শেয়ার আইএফসির কাছে হস্তান্তরে আর কোনো বাধা থাকে না।

এদিকে আইএফসির বিনিয়োগ চুক্তির পর থেকে শেয়ারটির দর বাড়তে থাকে। চুক্তির আগে গত বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে শেয়ারটি ২০ থেকে ২২ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। চলতি বছর যা সর্বোচ্চ ৪৩ টাকা ৪০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ ২৩ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসের মধ্যে ২৮ মার্চ শেয়ারটি সর্বোচ্চ ৪১ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। তবে গত দুদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে। গতকাল সর্বশেষ ৩৯ টাকা ১০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। অর্থাৎ দুদিনে দর কমেছে ২ টাকা ৩০ পয়সা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণাকে সামনে রেখে শেয়ারের দর বাড়ে। অথচ সিটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে দর কমেছে। কিন্তু আইএফসির বিনিয়োগের খবরে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। আগেই অতিমূল্যায়নের কারণে এখন শেয়ারদরে পতন হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকটির শেয়ারদর আগেই বেড়েছে। এ কারণে লভ্যাংশ ঘোষণাকে সামনে রেখে দরে তেমন প্রভাব পড়েনি। কিছু শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্যায়নের কারণে এভাবে দরপতন হতে দেখা যায়।

এদিকে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ টাকা ৪৬ পয়সা।

লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে কোম্পানিটি ২২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০১৪ সালে ঘোষিত ২০ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ ছিল বোনাস। এর আগের বছরগুলোতে কোম্পানিটি বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।

কোম্পানিটি ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। মোট শেয়ার সংখ্যা ৮৭ কোটি ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩১টি। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার।

উল্লেখ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন হলে সিটি ব্যাংকের পর্ষদে আইএফসির দুজন পরিচালক নিযুক্ত হবেন। পাশাপাশি আইএফসির কাছ থেকে প্রতি ডলার ৮০ টাকা হারে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরযোগ্য ২ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ারও পরিকল্পনা করে ব্যাংকটি। শর্তানুসারে এ ঋণের আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ অর্থ পরে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০