লাইটার জাহাজের সংকট দূর হোক

লাইটার জাহাজের সংকটে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজজট ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা কোনো ইতিবাচক বার্তা দেয় না। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ২০১১-১২ অর্থবছরে এ বন্দরের বহির্নোঙর দিয়ে খালাস হওয়া পণ্যের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৭৮ লাখ টন আর এর পরিবহনে নিয়োজিত ছিল হাজারখানেক লাইটার জাহাজ। এদিকে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ কোটি টন পণ্য। অথচ এর পরিবহনে নিয়োজিত ছিল ৭০০’র কাছাকাছি লাইটার জাহাজ! স্পষ্টত ওই পাঁচ বছরে আমদানি তিনগুণ হলেও বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাসে ব্যবহƒত লাইটার জাহাজ কমেছে তিন শতাধিক। প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইটার জাহাজের উপস্থিতি বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখত এবং তা আমদানি পণ্যের মূল্য হ্রাসেও ভূমিকা রাখতে পারত।

বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ কম কেন, তার ব্যাখ্যা বিদ্যমান। সেটি হচ্ছে, নতুন করে লাইটার জাহাজ নির্মাণের অনুমতি না মেলায়ই ঘটছে এমন বিপত্তি। যদিও খবর রয়েছে, প্রকাশ্যে লাইটার জাহাজ অনুমোদন বন্ধ রাখা হলেও লোকচক্ষুর অগোচরে অবৈধ পন্থায় তেমন অনুমতি জোগাড় করে নিচ্ছেন কেউ কেউ। সম্প্র্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে এক নৌপ্রকৌশলীর আটক তেমন আঁতাতেরই ইঙ্গিত বহন করে। এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকে বলছেন লাইটার জাহাজের নির্মাণ বাড়াতে। তবে কোনো কোনো খালাসি মনে করেন, বর্তমানে যে সংখ্যক লাইটার জাহাজ রয়েছেÑসেগুলো দিয়েই পণ্য খালাসের চাপ সামলানো সম্ভব। তারপরও যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কৃত্রিম। তাদের মতে, এ সংকট সৃষ্টির প্রধান কারণ একশ্রেণির ব্যবসায়ী জাহাজকে ব্যবহার করছেন ভাসমান গুদাম হিসেবে। তারা নাকি বিবেচিত সময় পর্যন্ত পণ্য মজুত রাখছেন সেখানে। অতঃপর সুবিধাজনক সময়ে খালাস করছেন সেগুলো। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ব্যস্ত থাকছে কিছু লাইটার জাহাজ। এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে অন্য আমদানিকারকদের। অভিযোগটির সত্যতা অবিলম্বে যাচাই করা দরকার। কেননা তা কেবল লাইটার জাহাজের সংকট নিরসনে নয়, আমদানি বাণিজ্যে ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থেও দরকার।

পাশাপাশি আমরা বলব, নিয়ন্ত্রিতভাবে হলেও লাইটার জাহাজ নির্মাণে জোর দেওয়া হোক। নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বাড়াতে সরকার এরই মধ্যে দেশব্যাপী নদী ড্রেজিংয়ের নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পর্যাপ্ত লাইটার জাহাজ সারা দেশের চিহ্নিত নৌবন্দরগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারলে সুফল যাবে স্থানীয় অর্থনীতিতে। তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি ও পরিসর বেড়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। আরেকটি বিষয়, স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে। বন্দরটির সক্ষমতা এরই মধ্যে অনেকটা বেড়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটি সন্তোষজনক বলা যাবে না। বরং চট্টগ্রাম বন্দরে অযথা বাড়তি সময় ব্যয় হয় বলে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক অঙ্গনে ‘গুজব’ চালু রয়েছে এখনও; যার প্রধান কারণ নির্ধারিত সময়ে পর্যাপ্ত পণ্য হ্যান্ডল করতে না পারা। অন্যান্য বিষয় বাদ দিলেও এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত লাইটার জাহাজ পণ্য খালাসে কিছুটা গতি আনতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সে লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে লাইটার জাহাজ নির্মাণের অনুমোদন মুক্ত করে দেওয়া যায় কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তার সঙ্গে ভাসমান গুদাম হিসেবে লাইটার জাহাজের ব্যবহার রোধকল্পে নিতে হবে শক্ত পদক্ষেপ।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০