Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:45 pm

লাতিন আমেরিকার ১২ দেশে অভিন্ন মুদ্রা চালুর প্রস্তাব

শেয়ার বিজ ডেস্ক: লাতিন আমেরিকার ১২টি দেশকে নিয়ে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা গোটা দক্ষিণ আমেরিকায় বাণিজ্যের জন্য নিজস্ব মুদ্রা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্য দেশগুলোও তার প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। খবর: ডয়চে ভেলে।

নাম না করে ডলার বন্ধের কথা বলেছেন লুলা। তিনি বলেন, দক্ষিণ আমেরিকার ভেতর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের বিদেশি মুদ্রার ওপর নির্ভর করতে হয়। তার বদলে আমরা নিজেদের একটি মুদ্রা তৈরি করতে পারি।

নতুন এই মুদ্রা কীভাবে চালু করা যায়, তা দেখতে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গত এক দশকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো ক্রমেই দক্ষিণপন্থিদের হাতে চলে গিয়েছিল। আবার তা বামপন্থিদের হাতে আসতে শুরু করেছে।

ব্রাজিলের সম্মেলনকে তেমনই এক বামপন্থি জোটের বৈঠক হিসেবে চিহ্নিত করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য, একসময় লাতিন আমেরিকায় উনাসুর (ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশনস) ব্লক যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা অকেজো হয়ে পড়েছিল। লুলার নেতৃত্বে আবার তা তৈরি হচ্ছে। লাতিন অঞ্চলের বামপন্থি প্রেসিডেন্টরা ২০০৮ সালে ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশনস (উনাসুর) নামের এই আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে কয়েকটি দেশে ডানপন্থি সরকার ক্ষমতায় এলে মতাদর্শিক বিভক্তির কারণে এর কার্যক্রম বেশি দূর এগোয়নি। এ নিয়ে তখন অঞ্চলটিতে কূটনৈতিক টানাপড়েনও সৃষ্টি হয়। লুলা দা সিলভা বলেন, নেতাদের উনাসুরকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে না, বরং আলাদা ধরনের একটি সংগঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মূল ধারণাটি হলো অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও পরিবেশগত বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমাদের একটি জোট দরকার। আমাদের একে অপরের সঙ্গে কথা বলা শিখতে হবে।

১২টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় প্রায় এক দশকের মধ্যে কোনো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জড়ো হন লাতিন আমেরিকার নেতারা। শুধু পেরুর রাষ্ট্রপ্রধান এতে যোগ দিতে পারেননি। কারণ তার বিরুদ্ধে দেশের ভেতর ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট দক্ষিণপন্থি বলসোনারো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে একনায়ক আখ্যা দিয়েছিলেন। তাকে কোনো সম্মেলনে ডাকা হতো না। লুলা এদিন মাদুরোর প্রশংসা করেছেন। আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপ্রধানও তার প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ লাতিন আমেরিকা গড়ে তোলার সময় এসেছে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমঝোতা হওয়া জরুরি।

লুলার নেতৃত্বে লাতিন আমেরিকায় বামপন্থি ব্লক শক্তিশালী হলে বিশ্ব রাজনীতির অঙ্ক আবার নতুন পথে আবর্তিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সম্মেলনে নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সমন্বিত পন্থা নিয়েও আলোচনা করবেন। প্রসঙ্গত লাতিন অঞ্চলে বর্তমানে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বাড়ছে।

ব্রাজিল এই মুদ্রার নাম প্রস্তাব করেছে ‘সুর’। এর অর্থ দক্ষিণ। আর্জেন্টিনাভিত্তিক ওয়েবসাইট পারফিলে প্রকাশিত নিবন্ধটিতে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার শীর্ষ দুই নেতা লিখেছেন, আমরা আমাদের বিনিময়ের বাধাগুলো অতিক্রম করতে, নিয়মগুলোর সরলীকরণ ও আধুনিকীকরণ করতে এবং স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে চাই। আমরা একটি সাধারণ দক্ষিণ আমেরিকান মুদ্রার বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি আর্থিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রের  জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পরিচালন বাধা এবং আমাদের বাহ্যিক দুর্বলতা কমাতে সহায়তা করতে পারে। একটি সাধারণ মুদ্রার ধারণা মূলত ব্রাজিলের বর্তমান অর্থমন্ত্রী ফার্নান্দো হাদ্দাদ এবং তার নির্বাহী সচিব গ্যাব্রিয়েল গালিপোলো গত বছর লিখিত একটি নিবন্ধে প্রথম উত্থাপন করেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় লুলা এই বিষয়টি একাধিকবার উল্লেখ করেছিলেন।

দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিবেশী দেশগুলো চলতি সপ্তাহেই একটি সাধারণ মুদ্রা প্রচলনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করার ঘোষণা দিতে পারে।