সিন্ডিকেটের কারসাজি

লাফিয়ে বাড়ছে তেল চিনি ডাল এলাচের দাম

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে তেল, চিনি, ডাল, এলাচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে একধিক পণ্যে মণপ্রতি হাজার টাকার ওপরে দাম বেড়েছে। ১৫ দিন আগে পাম তেল দুই হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তিন হাজার ১০০ টাকা। সয়াবিন তেলেও মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা। আর দুই মাস ধরেই বাড়তি চিনির বাজার। কিন্তু লাগাম টানা যাচ্ছে না এলাচের বাজারে। আমদানি মূল্য সাড়ে ৮০০ টাকা হলেও খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৯৩০ টাকা দরে। পাশাপাশি মশুর, মটর ও মরিচেও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খাতুনগঞ্জ বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাম তেল প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকায়, যা গতকাল বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ১০০ টাকায়। একই সঙ্গে সয়াবিন তেল ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মণপ্রতি দুই হাজার ৮০০ টাকা থাকলেও এখন বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। এদিকে চিনির বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। যদিও দুই মাস ধরে চিনির বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে চিনি দুই হাজার ২০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দেশি মশুর ডালের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আমদানি করা নিপা মশুর ডালের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ১৫ দিন আগে নিপার মশুর ডাল প্রতি মণ এক হাজার ৫০০ টাকা থাকলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৮০০ টাকা করে। পাশাপাশি মটর ডালের দাম বেড়েছে সাত-আট টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ২৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকা দরে। একই সঙ্গে দেশি ও আমদানিকৃত দুই ধরনের মরিচের দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে দেশি মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১৪৫ টাকায়, যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকায়। আর ভারত থেকে আমদানিকৃত মরিচ ১৯০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে কোনো অবস্থাতেই এলাচের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বেড়েই চলছে এলাচের দাম। নভেম্বরের শুরু থেকে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে খাতুনগঞ্জের এ সিন্ডিকেটটি। অক্টোবরে দুই হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে বাজার শুরু হলেও নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। আবার নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের শুরু থেকে তিন হাজারের মধ্যে থাকে, যা গত সপ্তাহে দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গতকাল দেখা যায় তিন হাজার ৯৩০ টাকায় বিক্রি হয়। যদিও প্রকৃত আমদানি মূল ৮৫৭ টাকার বেশি নয়। কিন্তু সারা দেশের মসলার বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে নিয়ন্ত্রণ হওয়ার ফলে ডিও (সিøপ/টোকেন) ব্যবসার মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করছে অবৈধ সিন্ডিকেট।

যদিও মসলাবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুবাই ও ভারতে এলাচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গুয়াতেমালা থেকে বাংলাদেশে এলাচ আমদানি হচ্ছে না। তাই বাজারে এলাচের সংকট দেখা দিয়েছে, এতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও প্রকৃতপক্ষে এলাচ আমদানি স্বাভাবিক।

গত ১ জুলাই থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৯৬০ কেজি এলাচ আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ১০২ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার ৫৭ টাকা। এতে প্রতি কেজি এলাচের মূল্য পড়ে ৮৫৭ টাকা করে। ২৪ আমদানিকারক ৮৩টি চালানের মাধ্যমে এই এলাচ আমদানি করে। এর মধ্যে দুই-তিন জন ছাড়া সবাই চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক।

অপরদিকে গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে এলাচ আমদানি হয়েছিল ৪৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬১৪ কেজি, যার প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ছিল ৮৫৩ টাকা। ৫৮ আমদানিকারক এ এলাচ আমদানি করেন। এর মধ্যে ৪৭ জনই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক।

খাতুনগঞ্জ ডাল আড়ত ব্যবসায়ী সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোলেমান বাদশা বলেন, ‘আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলে বিভিন্ন সিন্ডিকেট তৈরি করে ডিও (সিøপ/টোকেন) ব্যবসা করছে। তাদের কারণে একাধিক পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে তেল, চিনি, ডাল, এলাচ, মরিচ, মটরÑসবকিছুর দাম বেড়েছে ডিওর কারণে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা শুধু পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কাজ করেছিলাম। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। জরিমানা করেই আমাদের কাজ শেষ করতে হয়। কোনো মামলা করতে পারি না।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০