লাভ না থাকায় পুঁজিবাজারে আসতে চায় না কোম্পানিগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে কোম্পানিগুলোর কাছে প্রস্তাব দেয়া হলে তারা তালিকাভুক্তির লাভ সম্পর্কে জানতে চায়। কিন্তু তালিকাভুক্তিতে কোম্পানির জন্য কোনো লাভ না থাকায় তারা পুঁজিবাজারে আসতে চায় না বলে জানিয়েছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। গতকাল সোমবার পুঁজিবাজারের নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর? সঙ্গে তাদের ভূমিকা বিষয়ক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সমন্বয় সভায় সংশ্লিষ্ট বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএসই চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান।

এ সময় ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, প্রতি বছর বাজেটের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভ্রান্ত করতে চাই না। তাদের সঙ্গে আমাদের এমন সময় মিটিংয়ের আয়োজন করা হয় সে সময় বাজেটে তাদেরও কিছু করার থাকে না।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, দৃশ্যত তা খুবই হতাশাজনক। কিন্তু আমরা এখানে আশার আলো দেখছি, কারণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো উঠে এসেছে। এখন আমরা সেগুলো শিগগির সমাধান করতে পারব।

চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা এক দিনের আলোচনা বা সেমিনার করে সমাধান করা সম্ভব নয়। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর অনেক বিষয় দেখতে হয়।

এ অবস্থায় আমাদের একটি মাল্টিডাইমেনশনাল বডি তৈরি করা উচিত, যারা বাজারের সঠিক পর্যালোচনার মাধ্যমে কীভাবে মার্কেটকে ওঠানো যায় তার দিক নির্দেশনা তৈরি করবে, যেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দিতে পারব। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদি আমরা শুধু নিজেদের সমস্যার সমাধান নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাহলে মার্কেটকে ভালো করা যাবে না। পুরো মার্কেটকে সামনে রেখে আমরা যদি একটি গাইডলাইন তৈরি করি, বিভিন্ন আইনের দুর্বলতাগুলোকে যদি এক জায়গায় এনে সমাধান করি তাহলে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বাজেটের আগে ডিএসই, সিএসইসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বৈঠকের জন্য ডাকা হয়। সেখানে আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো দিয়ে আসি। কিন্তু বাস্তবে যে সময়টিতে আমাদের ডাকা হয় সে সময়টিতে বাজেটের অনেক কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। পুঁজিবাজারের জন্য চিন্তা করতে হলে আমাদের সংশ্লিষ্ট দুটি পক্ষের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এর একটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অপরটি বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই আমাদের দাবি-দাওয়া বাজেটে প্রতিফলিত করতে হলে এ দুই পক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বৈঠক করতে হবে।

ছায়েদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে যখন প্রস্তাব দেয়া হয়, তখন কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে তাদের লাভ কী সে বিষয়ে জানতে চায়। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের লাভের বিষয়ে বলতে পারে না। কারণ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো জানে না যে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর কী লাভ হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে কোম্পানিগুলো ব্যাংকনির্ভর। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানির এক দেড় বছর সময় লাগে। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। সে ক্ষেত্রে সরকারের পলিসি থেকে উদ্বুদ্ধ করানো না যায়, তাহলে তালিকাভুক্তি বাড়ানো যাবে না। সরকারি হিসেবে কোম্পানি আছে ২ লাখের বেশি, মার্কেটে রয়েছে ৩৫০টি কোম্পানি, যা ২ শতাংশের কম। কারণ তাদের তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তিন বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায়, সময় বেশি লাগলেও বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশ নেয়া বেশি বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকের অবস্থার উন্নয়ন করতে পারলে আইপিও বাড়বে। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে বাধাগ্রস্ত হয়। তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু তারা অর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা পায় না এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয় না। এ সময় তিনি তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর বিষয়টি এনবিআরকে আবারও বিবেচনা করার আহ্বান জানান।

আরও বক্তব্য দেন ডিএসই’র প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ, লংকা বাংলা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আলম, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেনারেল ম্যানেজার মাজেদা খাতুন, আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা উদ্দিন আহমেদ, এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০