লালপুরে কেটে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ

প্রতিনিধি, লালপুর (নাটোর) : নাটোরের লালপুরে দরপত্রের মাধ্যমে রাস্তার পাশের প্রায় এক হাজার গাছ ঢালাও ভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে। তবে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ না কাটার দাবি তুলেছে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন।

জানা গেছে, উপজেলার মোহরকয়া কলেজ থেকে অমৃতপাড়া ও কলেজের পেছন থেকে রহিমপুর পর্যন্ত দুই প্লটে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১২ বছর আগে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ। ২০২৩ সালে প্রায় এক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নম্বর দিয়ে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও পথচারীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। ইতিমধ্যে চার-তৃতীয়াংশ গাছ কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সেই কাটাগাছগুলো আশেপাশের ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখনো প্রায় ৩শতাধিক গাছের গায়ে নম্বর বসানো। সেগুলোও কাটা হবে।

স্থানীয় কৃষক মহাসিন আলী শেয়ার বিজকে বলেন, নিয়মিত আমরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি প্রায়ই সড়কে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়। গাছগুলো কাটায় আর বসা হবেনা। গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারে।
সিয়াম আহম্মেদ নামে আরেকজন বাসিন্দা বলেন, এক মাস আগেও এই সড়কে আরামে চলাচল করত পথচারীরা। এখন সেখানে ধু-ধু মরুভূমি, তীব্র রোদ। অল্প কিছু টাকার জন্য সরকার যেন আর গাছ না কাটে।

বিলমাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক আলী মিষ্টু শেয়ার বিজকে বলেন, যেহেতু গাছগুলো আমাদের ছায়া দিচ্ছে। সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করছে। সেহেতু গাছগুলো না কাটাই ভালো। গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, তীব্র তাপদাহ চলছে। তিনি গাছ না কাটার দাবি জানান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে ১৭ ভাগ বনায়ন থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় বনায়ন আছে মাত্র ৭ ভাগ। তবুও সামান্য অর্থের লোভে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। আর লালপুর এমনিতেই দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম এবং কম বৃষ্টিপাতের উপজেলা। এখানে বনায়ন খুবই কম, সেখানে বনবিভাগ কখনোই এভাবে গাছ কাটার অনুমতি দিতে পারে না। বনবিভাগ গাছগুলো রক্ষার উদ্যোগ না নিলে কঠোর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থ-সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ করেন। গাছ দেখাশোনা করেন সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হয়, তখন গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বনবিভাগ। গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পান সমিতির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ পায় ৫ ভাগ। আর বনবিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ পায় ২০ ভাগ করে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার শেয়ার বিজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে বনবিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন।

রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ্ শেয়ার বিজকে বলেন, সামাজিক বনায়ন প্রকল্পেরর গাছ নির্ধারিত সময় পার হওয়ায় নীতিমালা মোতাবেক সরকারি ট্রেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হয়। সামনের বর্ষায় পুনরায় গাছ লাগানো হবে। সমিতির নিয়ম অনুসারে গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০