শিপন আহমেদ: ব্যস্ততার মাঝে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে বেড়াতে পারলে মন ভালো হয়ে ওঠে। হাওয়া বদল মনে আনে স্ফ‚র্তি, বাড়িয়ে দেয় প্রাণশক্তি। কিন্তু হুটহাট ঘুরতে যাওয়ার সময়ই বা কই পাই? তাছাড়া রাজধানীর বাইরে যে কোনো জায়গায় যাওয়া-আসা, ঘুরে বেড়ানো বেশ সময়সাপেক্ষ। খরচের দিকটিও চিন্তায় আসে। তাই কম সময়ে ঢাকার আশপাশে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করি।
ছোট ভাগ্নের আবদার মেটাতে এক ছুটির দিনে গন্তব্য ঠিক করলাম লালবাগ কেল্লা। সকালে রওনা দিয়ে ঘুরেফিরে দিনে দিনে বাসায় ফিরে আসা সম্ভব। জায়গাটি অনেক সুন্দর। ভালো লাগবে। আমরা যথাসময়ে বাসা থেকে লালবাগ কেল্লার দিকে রওনা দিলাম।
বাসা থেকে লালবাগ কেল্লায় যেতে সরাসরি কোনো পরিবহনের বাস নেই। তাই প্রথমে শ্যামলী থেকে চলে আসি সায়েন্স ল্যাবে। এখান থেকে রিকশায় চড়ে পৌঁছালাম লালবাগ কেল্লায়।
রাজধানীর প্রাচীন দুর্গ লালবাগ কেল্লা। মুঘল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি আমাদের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র এটি।
বর্গাকৃতির সুউচ্চ প্রাচীরঘেরা কেল্লার প্রথমেই নজর আসে বিশাল ফটক। প্রথমে আমরা নামমাত্র টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে পা ফেলতেই চোখে পড়ে বাগানঘেরা পরিবেশ। সোজা একটু ভেতরে শায়েস্তা খানের প্রিয় মেয়ে পরীবিবির সমাধিসৌধ। কয়েকটি ফোয়ারা, পাহাড়ি উঁচু টিলা, সুড়ঙ্গপথ ও কেল্লার দক্ষিণে একমাত্র পুকুর দেখতে পাই। পুকুরটির চারদিকের ঘাট বাঁধানো সিড়ির মতো। পুকুরটি বর্গাকৃতির। পেছনে সৈনিকদের ব্যারাক, যা বর্তমানে আনসার ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও রয়েছে কয়েকটি সুড়ঙ্গপথ। এসব জায়গায় দর্শনার্থীদের প্রবেশনিষেধ।
লালবাগ কেল্লার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় কেন্দ্র হচ্ছে, সুবেদার শায়েস্তা খানের বাসভবন ও দরবার হল। বর্তমানে লালবাগ কেল্লা জাদুঘর হিসেবে এটিকে দর্শনার্থীদের জন্য উš§ুক্ত রাখা হয়েছে। এই জাদুঘরে শায়েস্তা খানের ব্যবহার করা দ্রব্যসামগ্রী, হাম্মামখানা, প্রসাধনী কক্ষ, শৈাচাগার, পোশাক পরির্বতনের কক্ষ, গরম পানি ও বাতাস প্রবাহের চুল্লি, পানি সংরক্ষণাধার প্রভৃতি রয়েছে। তৎকালীন সম্রাট ও শাসকদের শাসনামলে ব্যবহƒত মুদ্রা সোনা, রুপা, তামা, সিসা ও লোহার মিশ্রণে নানা বস্তুও স্থান পেয়েছে এখানে। মুদ্রাগুলো আকারে বর্গাকৃতির ও গোলাকার। তৎকালীন ও তৎপূর্ব মানচিত্র, গামলা, পারস্যে তৈরি থালা-বাসন ও ট্রে এবং শীলা পাথর রয়েছে। ১৭ থেকে ১৯ শতকের বর্শামূল, বর্শাফলক, ছোরা ও খাপ, তীর ও বর্শা, ঢাল ও তরবারি, বন্দুক ও রাইফেল, হাতকুঠার, তীর-ধনুক, সৈনিকদের পোশাক, রাজার পোশাক, সিসার গুলিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় জিনিস রয়েছে এই জাদুঘরে।
সপ্তদশ শতকে পারস্যে তৈরি তিনটি কার্পেট, ঝারবাতি, ল্যাম্প, জায়নামাজ ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলের একটি মসজিদ ও বাগান তৈরির বিবরণ দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। এছাড়া আরও রয়েছে মুঘল চিত্রকলা দুরদানার প্রতিকৃতি, সিংহাসনে বসা এক রাজার প্রতিকৃতি, শাহজাদা আজম শাহের প্রতিকৃতি, সিংহাসনে বসা সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রতিকৃতি, যুবরাজ ও যুবরাজ্ঞীর অশ্ব চালনা প্রভৃতি।
লালবাগ কেল্লার ভেতরের সবকিছু দেখতে দেখতে কখন যে সময় ফুরিয়ে গেল টেরই
পেলাম না। সেদিনের মতো তাই চলে আসি। সময়-সুযোগ মিললে আবারও আসব এখানে।
Add Comment