Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 7:28 pm

লালমনিরহাটে কমছে তিস্তার পানি, বাড়ছে ভাঙন

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: কান্না থামছে না শরিফা বেগমের। কোথাও থাকার জায়গা নেই। জমি বন্ধক নিয়ে ঘর করে আছেন। সেই ঘরটিও পড়েছে নদীভাঙনের কবলে। দুদিন পর মাথার ওপরে চাল থাকবে না। দাঁড়ানোর জন্য নিজের বলতে কিছুই থাকবে না। এমন পরিবারে সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তিস্তা পাড়ের শত শত পরিবার এভাবেই দিন পার করছে। এমন পরিস্থিতিতে নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রমত্তা নদী তিস্তা গিলছে ভিটেমাটি, ফসলি জমি ও সহায়-সম্বল। অহর্নিশ ভাঙছে নদী। ভাঙনের ফলে সকালের আমনের ক্ষেত বিকালে নদীতে পরিণত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে ঘুম নেই কৃষকের। অনেকেই চিন্তিত যে, কখন নদীগর্ভে চলে যাবে ঘরসুদ্ধ ভিটেটুকু।

এ বছর বর্ষার শুরুতে নদীভাঙনের চিত্র দেখা যায়নি। তবে পঞ্চমবারের মতো নদীর পানি বৃদ্ধি ও বন্যায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে আশঙ্কাজনক মাত্রায়। এ পর্যন্ত খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ২৫টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ফসলি জমি ও বাসস্থান এখন নদীগর্ভে। বর্তমানে তিস্তা ভাগ হয়ে কয়েকটি চ্যানেলে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিনই ভাঙছে বাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। দিনে যেমন ভাঙছে, তার থেকে ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করছে রাতে। এযাবৎ ২৫০ একর জমি একটি ইউনিয়নেই ভেঙেছে। ভাঙনের শঙ্কায় আছে চোঙাটরা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত চারতলা ভবন, যার কাজই এখনও শেষ হয়নি।

সরিফা বেগম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘নদীভাঙনের পর প্রায় প্রতিদিনই সরকারি গাড়ি আসছে। তারা ঘুরেফিরে দেখছে। নদীতে একপাশে মাটির বস্তা ফেলা হয়েছিল। এখন বস্তা দেয়া বন্ধ করলেই নদী ভাঙছে। চাষাবাদ কিছুই নেই, সব নদীতে গেছে। কীভাবে আমরা চলব, জানি না। আমরা রিলিফ চাই না, আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। আমরা কাজ করে খেতে চাই।’

আবু তালেব (৭০) বলেন, ‘হামরা যে রুজি করি খামো, তার উপায় নাই। বিশকা বিশ জমি নদীৎ গ্যালো। হামরা রুজি করি খাবার চাই।’

ফজলুল হক বলেন, আবাদ তো দূরের কথা, এখন মানুষই বাঁচতে পারছে না। সরকারের উচিত দ্রুত সমাধান করা। এটা তো আর ছোট খাল নয়। দেড়-দুই কিলোমিটার ভাঙল। কারও কোনো খোঁজ নেই।

বেশ কয়েক সপ্তাহ বাদে গত ১ আগস্ট হঠাৎ নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকালে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা বাড়লে বিকাল ৩টায় ১০, সন্ধ্যা ৬টায় ২৫ ও রাত ৯টায় ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ৬ আগস্ট বিকাল ৩টায় তিস্তার পানিপ্রবাহ কমে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সদর উপজেলার খুনিয়া গাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল বলেন, তিস্তার বছর বছর বন্যায় আমরা অভ্যস্ত। আমার নিজেরই সব জমি চলে গেছে নদীতে। আমার ভিটেটা শুধু আছে। এ অঞ্চলের মানুষ তাদের বাবা-দাদার কবর প্রতি বছর জেয়ারত করতে চায়। ভাঙনের একটা স্থায়ী সমাধান চায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রজমান বলেন, প্রিলিমিনারি স্টাডি চলছে। অক্টোবরের শেষের দিকে রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রকল্পের ডিপিপি হবে। আপাতত খুনিয়াগাছ ইউনিয়নেই প্রধান ভাঙন আমরা চিহ্নিত করেছি। আর কোথাও তেমন ভাঙন নেই।

লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর বলেন, যাদের বাড়িঘর ভেঙেছে, তাদের বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসন করা হবে। বাড়ি মেরামতের জন্য ঢেউটিন ও নগদ অর্থ দেয়া হবে। এ পর্যন্ত ৮৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।