লালমনিরহাটে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সাপে কাটার চিকিৎসা নেই

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের বসবাস। সীমান্তঘেঁষা এ জেলায় পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। সাবেক ছিটমহল দহগ্রামে ১০ শয্যার হাসপাতাল ও হাতিবান্ধার দই খাওয়াতে একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল ও অনেক ছোটবড় ক্লিনিক রয়েছে। এত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকার পরও কোনোটি হয় না সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা। সাপে কাটলেই যেতে হয় ওঝা অথবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাপে কাটা রোগীর একমাত্র চিকিৎসা স্নেক ভেনাম অ্যান্টিসেরাম ইনজেকশন জেলার কোথাও পাওয়া যায় না। তবে অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, চিকিৎসক ঘাটতি, চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকাসহ নানা জটিলতা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চান জেলাবাসী।

সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেন, ইচ্ছে করলেই সাপে কাটা সব রোগীকে এই ইনজেকশন পুশ করা যায়না। তারপরও হাসপাতালে ডাক্তাররা আছেন, তারা মনে করলে চিকিৎসা দেবেন। আপাতত রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হচ্ছে রোগীদের।

সরকারের সরবরাহ করা ইনজেকশন আছে। তবে রোগী না পাওয়ায় তা ব্যবহার হচ্ছে না বলে জানান সিভিল সার্জন।

দেশে একমাত্র স্নেক ভেনম অ্যান্টিসেরাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লালমনিরহাটের মাঠ ব্যবস্থাপক রশিদুল হক জানান, আমাদের ভ্যাকসিন আছে অ্যান্টিভেনম নামে। ১০০০ টাকা দামে এটা বাজারজাত করা হয়। ইনজেকশনটি যে কোনো অবস্থায় রাখা যায় না। ভ্যাকসিন রাখার নির্দিষ্ট রেফ্রিজারেটর রাখতে হয়। এটি লালমনিরহাটে পাওয়া যায় না। কারও প্রয়োজন হলে আমি এনে দিতে পারব। অথবা রংপুরে আমাদের ডিপো আছে, সেখান থেকে নিতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি কালীগঞ্জ উপজেলার দুহুলী গ্রামের মৃত মোনতাজ উদ্দিনের মেয়ে মনজিলাকে সাপে কাটে। পরে একজন ওঝা ডেকে চিকিৎসা করান তার পরিবারের লোকজন। ওঝা খুবই ভালো বলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।

আদিতমারী সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফাইনান্সের শিক্ষক মোহন সাহ্ বলেন, সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষ সাপে কাটার ভয়ে থাকেন এবং এ নিয়ে কুসংস্কারও রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এ ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। ব্যাপক প্রচারণা চালানো উচিত, জনগণকে যেন আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসে সে ব্যাপারে তাদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কার্যক্রম আমার  চোখে পড়েনি।

ইাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার জীবনে কোনোদিন সাপে কাটা রোগীকে চিকিৎসা দেননি বলে জানান। তিনি বলেন, শুনেছি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন থেকে স্নেক ভেনাম অ্যান্টিসেরাম দেয়া হয়। আমার চাকরি জীবনে সরকারি সরবরাহ পাইনি। সাপে কাটা রোগীকে এ ইনজেকশন পুশ করার পর হাইপার সেনসিটিভিটি হতে পারে, যা কাভার করতে না পারলে রোগীর ক্ষতি হতে পারে।

লালমরিরহাট সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্নেক ভেনাম অ্যান্টিসেরাম মেডিকেল কলেজগুলোয় দেয়া হয়। এটা আমরা দেই না। সরবরাহ ইনজেকশন আনলেও আমার রাখার ব্যবস্থা নেই। স্টোরে রাখলে নষ্ট হবে। রোগীকে এ ইনজেকশন পুশ করতে গেলে ভেন্টিলেসন প্রয়োজন হতে পারে। ইনসেনটিভ  কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ছাড়া দেয়া যায় না।

লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক সুপেন দত্ত বলেন, আমাদের প্রায় ১২০ কিলোমিটারের জনপদ। এ জেলাতে একটি মাত্র ১০০ শয্যার হাসপাতাল। এখানে সাপেকাটা রোগী ছাড়াও হার্টের রোগীর জন্য হলেও আইসিইউ প্রয়োজন। এখন ঘরে ঘরে হার্টের রোগী। কিছু হলেই রংপুরে যেতে হয়। বুড়িমারী-পাটগ্রাম থেকে রোগী আশা কঠিন। সদর হাসপাতালে একজন মাত্র মেডিসিনের কনসালটেন্ট আছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য  কেন্দ্রগুলোতে বিশেজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। অচিরে লালমনিরহাটে পর্যাপ্ত আইসিইউ সুবিধা দেয়া হোক। আমরা যে কোনো উপায়ে লালমনিরহাটের মানুষের উন্নয়ন চাই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০