কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত’। রাতে পাকিস্তান রেডিওতে ঢাকায় কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়া হয়।
২ মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্র সমাবেশে বাংলার মাটিতে প্রথম লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব। এর আগে ১৯৭০ সালের ৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্রদের সামরিক কুচকাওয়াজ সামনে রেখে একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (সাবেক ইকবাল হল) ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম বৈঠক করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেনÑছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসূফ সালাউদ্দিন আহমেদ, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবনারায়ণ দাশ। কাজী আরেফের প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনা শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মধ্যে হলুদ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউমার্কেটের এক বিহারি দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনেন। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিতুমীর হলে (সাবেক কায়েদে আজম হল) ৩১২ নম্বর কক্ষেতে বসে ট্রেসিং পেপারে পতাকাটি আঁকা হয়। ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ লাল বৃত্তের মাঝে আঁকেন বাংলার মানচিত্র।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব। পরদিন ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মোহাম্মদ শাজাহান সিরাজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম নিজ হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ২৩ মার্চ ধানমন্ডিতে তার নিজ বাসভবনে। বিদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে। প্রতি বছর ২ মার্চ দিনটি জাতীয় পতাকা দিবস পালিত হয়।