লাশ বহন করেই সংসার চলে মিজানের

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুরে কোথাও লাশ উদ্ধার হলেই ডাক পড়ে মিজানুর রহমান মিজানের (৬৭)। পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া লাশ ভ্যানে করে ডোম ঘরে (মর্গ) নিয়ে যাওয়া আবার ডোমঘর থেকে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়ায় মিজানুর রহমানের পেশা। এ ছাড়াও লাশের পরিচয় অজ্ঞাত হলে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনে কবরস্থান পর্যন্ত লাশ বহনের কাজ করেন তিনি। কুষ্টিয়ার হাউজিং এ ব্লকের মৃত দলিল উদ্দীন ছেলে মিজানুর রহমান মিজান।

বর্তমানে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস তার। এখানে প্রায় ৩৪ বছর ধরে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন। মিজানুরের দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান। মিজানুর রহমান জানান, ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। এরপর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ানে চাকরি শুরু করি। ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রথম আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ন কমান্ডিং অফিসার সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে চাকরি চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, চাকরি চলে যাওয়ার পরে দুর্বিসহ সময়ে কুষ্টিয়ার হাউজিংয়ের বাড়ি বিক্রি করতে হয়। চাকরি চলে যাওয়ার কারণে প্রথম স্ত্রীও মিনাজ নামের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে সে সময় তিনি ভ্যান চালনা শুরু করেন।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের দিকে ভ্যানচালক হিসেবে মিরপুর থানা থেকে একটি লাশ ডোম ঘরে নিয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে এই পেশা শুরু করেন ভ্যানচালক মিজান। সেই থেকে মিরপুর থানার লাশ পরিবহনে কাজ করছেন তিনি। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি আনুমানিক প্রায় দুই হাজার লাশ বহন করেছেন। লাশ পরিবহন ছাড়াও তিনি ভ্যান চালান। মিজানের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ঘরে মাহবুব মিনাজ নামের এক ছেলে সন্তান আছে। বর্তমানে তার ছেলে মিনাজ যশোর রুপদিয়া বাজারে ব্যবসা করেন। তবে পিতা মিজানের খোঁজ রাখেন না তিনি।

লাশ পরিবহনে ভয় লাগে নাÑ এমন প্রশ্ন জবাবে মিজান বলেন, প্রথম প্রথম ভয় লাগত। এখন আর ভয় লাগে না। এখন ভয় লাগে ভ্যানে যখন জীবিত মানুষ বহন করি তখন। মৃত মানুষকে নিয়ে কোনো ভয় করে না।
মিজান বলেন, লাস পরিবহনের কারণে যাত্রীরা আমার ভ্যানে উঠতে ভয় পান। এজন্য ভ্যান চালিয়ে আমার সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রতিটি লাশ পরিবহনে ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া পেয়েছি। ভাড়া নির্ভর করে লাশের স্বজনদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী। তবে লাশের পরিচয় অজ্ঞাত হলে থানা থেকে ভাড়া পরিশোধ করে।

মিজান বলেন, আর্মস ব্যাটালিয়ন এআইজি মহোদয়ের কাছে আমি দশ বছর চাকরি করেছি। তাই আমার দাবি যাতে আমি এখন তো বুড়ো হয়ে গেছি, বেঁচে থাকার জন্য আমাকে অর্ধ পেনশন দেয়া হোক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০