নিজস্ব প্রতিবেদক: উৎপাদন বন্ধ থাকলেও লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারদর টানা বাড়ছে। গত তিন কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ১১ টাকা বা ২৭ শতাংশ। তবে উৎপাদন বন্ধের বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও কোম্পানির দর বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারসাজি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
তথ্যমতে, কোম্পানির শেয়ার গত ৩ অক্টোবর ৪২ টাকা ৯০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। দর বেড়ে গতকাল কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৫৩ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিনের চেয়ে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে চার টাকা ৮০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির দর বেড়ে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমায় স্পর্শ করেছে। কোম্পানিটির সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন ৪৪ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৫৩ টাকা ৭০ পয়সা, তাতেই স্পর্শ করেছে। আর চার কার্যদিবসে কোম্পানির দর বেড়েছে ১০ টাকা ৮০ পয়সা। এভাবে দর বাড়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে। এর আগেও একাধিকবার কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে। অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয় কোম্পানিটিকে। ওই সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। আবার টানা দর বাড়ছে।
এদিকে শেয়ারদর বাড়ার কারণ জানতে চাইলে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ম্যানেজার এসএম স্বপন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কী কারণে শেয়ারদর বাড়ছে, এটা আমারও প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানির শেয়ার কারা কেনাবেচা করছে, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ভালো জানে। তাছাড়া সার্ভিলেন্স সফটওয়্যারে শেয়ার বেচাকেনার তথ্য থাকে। সেখান থেকে দর বাড়ার কারণ উদ্ঘাটন করতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেখানে কারসাজি হচ্ছে কি না, তা সংস্থাটি জানাতে পারে। কিন্তু কেন সংস্থাটি খতিয়ে দেখছে না, সেটা আমারও জানার আগ্রহ।’
এছাড়া কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের বিষয়ে কয়েক দিন আগে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, ‘উৎপাদন বন্ধ হলে তো আয় হতো না এবং লভ্যাংশ ঘোষণা করা সম্ভব হতো না।’
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ তথ্যটি গোপন করেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। পাশাপাশি কোম্পানির মুনাফা দেখিয়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা চুপ করে বসে আছে। অন্যদিকে বর্তমান সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার অস্বাভাবিক বাড়ছে, তাতেও কোনো ধরনের খোঁজ নিচ্ছে না স্টক এক্সচেঞ্জ। আর এ সুযোগে কোম্পানি শেয়ারের দর বাড়িয়ে অসৎ চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ। এতে একটি শ্রেণি মুনাফা করলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
শেয়ার বিজের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের কারখানায় তিন বছর ধরে কোনো ধরনের পণ্য উৎপাদন হয় না। আর এ তথ্য গোপন রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর তা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তারা।
লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৩ সাল ও পরের বছর পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থান্তান্তর হয়। উৎপাদন বন্ধ থাকলেও গত সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।
পুঁজিবাজারে ২০০০ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা এক কোটি তিন লাখ ৩৯ হাজার ৯০৬টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ছয় দশমিক ৪১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ছয় দশমিক ১২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।