লিঙ্গবৈষম্য কমানো বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের পথকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকেই স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত নারী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর পেশাগত জ্ঞান ও মেধা প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সমাজে নারী-পুরুষের সমতা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করে এদেশের উন্নয়নকে টেকসই করা আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে নারীর দারিদ্র্য বিমোচনে নেয়া হয়েছে সমন্বিত উদ্যোগ।

‘বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য নারী-পুরুষ সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসেছি।’ গত ২৮ বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের পাসের হার আড়াই গুণ বাড়ার কথাও বলেন দীপু মনি।

‘১৯৯০ সালে ৩০ শতাংশ মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছিল। ২০১৯ সালে পাস করেছে ৮৩ শতাংশের বেশি মেয়ে। ১৯৯০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছিল ৩১ শতাংশ মেয়ে। আর ২০১৯ সালে পাস করেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ মেয়ে।’

বাংলাদেশ এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস ২০২০ সালের প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী ৫৫ দশমিক ০৭ শতাংশ নারী। উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ দশমিক ২৭ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী মেয়ে। আর মাদরাসা শিক্ষা পর্যায়ে মোট ৫৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী।

উন্নয়নের মূলধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করতে জেন্ডার বাজেটিং, মাইক্রো ফাইন্যান্স ও অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ এবং এসব ক্ষেত্রে নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ ভাগে উন্নীত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সরকার নারীর প্রতি সব রকম বৈষম্যমূলক আচরণ ও প্রথা বিলোপে বদ্ধপরিকর।’ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর পেশাগত জ্ঞান ও মেধা প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

‘ফলে কভিড মহামারির সময়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে নারীরা নিজেদের কর্মসংস্থান করতে পারছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ ভাগে উন্নীত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

শিক্ষামন্ত্রী জানান, উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারে এখন তিন হাজার ১৬০ নারী উদ্যোক্তা ই-তথ্য সেবা প্রদান করছেন। এছাড়া জয়িতা ফাউন্ডেশনের অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘ই-জয়িতা’ চালু ফলে দেশে এক লাখ নারী উদ্যোক্তা সংযুক্ত হতে পারবেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে সম্মাননা পদক, ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী।

এ বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী সিরাজগঞ্জ জেলার সানজিদা আক্তার শিমু। শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা আরজু।

সফল জননী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের খোশনাহার বেগম। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা বরিশাল বিভাগের জেসমিন আক্তার। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন রংপুর বিভাগের রোকেয়া বেগম।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০