ক্রীড়া ডেস্ক: একটা সময় ঢাকা টেস্টে ফলোঅনে পড়ার শঙ্কা উঁকি দিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে সপ্তম উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে তেমনটা হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। কিন্তু চা বিরতির পর এই দুই ব্যাটসম্যান দ্রুত ফিরলে ৩০০ রানের আগেই গুটিয়ে যায় টিম টাইগার্স। যে কারণে ১১৩ রানের লিড পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় দিন শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ রানে। তাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে চাপে পড়েছে মুমিনুল হকের দল।
প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০৯ রানের জবাবে গতকাল বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৯৬ রানে। স্বাগতিকদের হয়ে লিটন দাস ৭১, মেহেদি হাসান মিরাজ ৫৭ ও মুশফিকুর রহিম করেন ৫৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে নেমে দিন শেষে ৪১ রানে ক্যারিবীয়দের ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ক্রিজে রয়েছেন এনক্রুমা বোনার ৮ ও জোমেল ওয়ারিকান ২ রানে।
১১৩ রানে পেছনে থেকে গতকাল বল হাতে বাংলাদেশের দারুণ শুরু এনে দেন নাঈম হাসান। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকে (৬) উইকেটের পেছনে লিটনের ক্যাচে ফেরান তিনি। এর কিছুক্ষণ পর আক্রমণে এসেই দ্বিতীয় সিøপে মিথুনের ক্যাচে শেইনি মোজলিকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদি হাসান মিরাজ। এর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ১০০ টেস্ট উইকেট শিকারি বোলার বনে যান তিনি। ছাড়িয়ে যান তাইজুল ইসলামকে। ২৪ টেস্ট খেলে মিরাজ পূর্ণ করলেন উইকেটের সেঞ্চুরি। তাইজুলের লেগেছিল ২৫ টেস্ট।
মিরাজের রেকর্ডের রেশ থাকতে থাকতেই সফরকারী শিবিরে আঘাত করেন তাইজুল। এ স্পিনারের বল জন ক্যাম্পবেলের ব্যাটে লেগে স্টাম্পের বেলসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে টাইগাররা। কিন্তু লিড দেড়শ ঊর্ধ্ব হওয়ায় দিন শেষে ঠিকই আক্ষেপ থেকেই গেছে মুমিনুলদের।
এর আগে আগের দিনের ৪ উইকেটে ১০৫ রান নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেন বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। বেশ দেখেশুনে তারা খেলছিলেন। সে পথ ধরে ১৫০ বলে তাদের পঞ্চম উইকেট জুটি অর্ধশত রানও করে। তাতে বাংলাদেশ দেখেছিল ফলোঅনের হাত থেকে বাঁচার স্বপ্ন। কিন্তু ঠিক সে সময়ই রাকিম কর্নওয়ালের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিথুন ৮৬ বলে ১৫ রান করে। তার বিদায়ে ভাঙে ৭১ রানের পঞ্চম উইকেট জুটির। এর কিছুক্ষণ পরই ৮৯ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। এরপরই হঠাৎ কেন জানি মুশির খুব ইচ্ছে হল রিভার্স সুইপ খেলতে। কিন্তু কর্নওয়ালের নিরীহ এক বলে সেটা তিনি ঠিকমতো পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় কাভারে।
এর সঙ্গে সঙ্গে ১০৫ বলে ৫৪ রানের মুশির দারুণ ইনিংসটি শেষ হয়। বাংলাদেশও পড়ে ফলোঅনের শঙ্কায়। দলের এমন বিপদের মুহূর্তে গতকাল হাল ধরেন লিটন দাস-মেহেদি হাসান মিরাজ। লাঞ্চের আগে তারা বেশ দেখেশুনে খেলেন। এরপর চা বিরতি পর্যন্ত এ জুটি কোনো উইকেটই হারাতে দেননি। নিজেদের মতো করে খেলেন দুই তরুণ ব্যাটসম্যান। তবে তৃতীয় সেশনে আর পারেননি তারা। কর্নওয়ালের সাদামাটা এক ডেলিভারিতে ভাঙে মিরাজ-লিটনের ১২৬ রানের জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল প্যাডেল সুইপ করতে চেয়ে লিটন ক্যাচ দেন জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে। ফেরার আগে ৭ চারে ১৩৩ বলে ৭১ রান করেন লিটন। এই রান করার পথে টেস্টে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। এদিকে নাঈম হাসান টেকেন মাত্র ৩ বল। তাকেও ব্ল্যাকউডের ক্যাচে ফেরান কর্নওয়াল। এর ফলে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট পান কর্নওয়াল।
এদিকে আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মিরাজ গতকালও দারুণ খেলে সে সম্ভাবনা জাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গ্যাব্রিয়েলের এক বাউন্সারে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ৬ চারে ১৪০ বলে তার ৫৭ রানের ইনিংসটির অপমৃত্যু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৭৪ রানে ৫ উইকেট নেন কর্নওয়াল। এদিকে ৭০ রানে শেনন গ্যাব্রিয়েল ৩টি ও আলজারি জোসেফ ৬০ রানে নেন ২টি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৪০৯/১০ (১ম ইনিংস)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৯৬/১০ (৯৬.৫ ওভার), লিটন ৭১, মিরাজ ৫৭, মুশফিক ৫৪, তামিম ৪৪, মুমিনুল ২১, মিথুন ১৫, শান্ত ৪, সৌম্য ০;
কর্নওয়াল ৫/৭৪, গ্যাব্রিয়েল ৩/৭০, জোসেফ ২/৬০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ৪১/৩ (২১ ওভার), ক্যাম্পবেল ১৮, বনার ৮*; তাইজুল ১/১৩, নাঈম ১/১৪, মিরাজ ১/১৪।