ক্রীড়া ডেস্ক: বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ০-৩ ব্যবধানে হার। গতকাল প্রথম টেস্টেই মনে হচ্ছিল টি-টোয়েন্টি জুজুই ভর করেছে! টপ অর্ডারের ব্যর্থতার চিত্রে আরেকবার ক্রিকেট ভক্তদের মনে শঙ্কার মেঘ। কিন্তু দিনের শেষে শঙ্কার সেই মেঘ কেটে উৎসবের আমেজ। ৪৯ রান তুলতে যেখানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ, সেখানে ওই ৪ উইকেটেই স্কোর ২৫৩।
টাইগার ক্রিকেটের দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হতো। সেই দায়িত্বই যেন কাঁধে তুলে নিলেন লিটন দাস আর মুশফিকুর রহিম। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে লিটন-মুশফিকের দাপুটে ব্যাটিংয়ে কিছুটা আলোর দিশা খুঁজে পেয়েছে লাল-সবুজের দল।
দিনের প্রথম সেশনটা পাকিস্তানি বোলারদের সামনে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটাররা। দলীয় পঞ্চাশের আগেই সাজঘরে ফিরে যান প্রথম চার ব্যাটার। সেখান থেকে দিন শেষে ঠিকই চওড়া হাসি বাংলাদেশের সমর্থকদের মুখে। যার মূল কারিগর মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস।
জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান উইকেটরক্ষকের ব্যাটে ভর করে দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৩ রান। শেষ বিকালে আলোকস্বল্পতার কারণে নির্ধারিত ৯০ ওভারের পাঁচ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেছেন আম্পায়াররা। মাত্র ১৬.২ ওভারে ৪ উইকেট পতনের পর ৬৮.৪ ওভারে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিটন। ক্যারিয়ারের ২৬তম টেস্টের ৪৩তম ইনিংসে তিন অঙ্কে পৌঁছতে তিনি খেলেছেন ১৯৯টি বল। যেখানে ছিল ১০ চার ও একটি ছয়ের মার। দিন শেষে লিটন অপরাজিত রয়েছেন ২২৫ বলে ১১৩ রান করে।
অন্যদিকে লিটনের এক ওভার আগে উইকেটে যাওয়া মুশফিক অপেক্ষায় রয়েছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরির। তিনি ২৪তম ফিফটি করে অপরাজিত রয়েছেন ৮২ রানে, যা করতে মুশফিক খেলেছেন ১৯০ বল। তার ইনিংসে রয়েছে ১০টি চারের মার। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একাগ্রচিত্তে ব্যাটিং করেছেন মি. ডিপেন্ডেবল।
সাগরিকার পাড়ে ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানি বোলারদের শাসন করেন লিটন-মুশফিক।
সকালে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। ইনিংসের প্রথম ওভারেই শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে কোনো রান না করে ফিরতে পারতেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। তবে উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের হাতে বল ধরা পড়ার আগে যে সাদমানের ব্যাট ছুঁয়ে গেছে সেটি বুঝতে পারেনি সফরকারীরা। এ যাত্রায় বেঁচে যান সাদমান। তবে সুবিধা করতে পারেননি। হাসান আলীকে উইকেট দিয়ে ফেরেন ১৪ রানে।
তার আগে অবশ্য ইনিংসের পঞ্চম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির লাফিয়ে ওঠা বলে লাইন হারান সাইফ। যেটি জমা পড়ে আবিদ আলীর হাতে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ব্যর্থ এই ব্যাটসম্যান আউট হন ১২ বলে ১৪ রান করে। ১৪ রানের গেরো কাটাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তও। নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে ফাহিম আশরাফকে উইকেট দেন টেস্টে ‘অটো চয়েজ’ বনে যাওয়া শান্ত ।
পয়া ভেন্যু চট্টগ্রামে অধিনায়ক মুমিনুল হকের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। তবে এ যাত্রায় সতীর্থদের পথেই হাঁটলেন তিনি। ধীর-লয়ে ইনিংস শুরু করলেও সাজিদ খানকে উইকেট দেন ৬ রান করে। ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
৬৯ রানে দুপুরের খাবার খেতে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে দুই ব্যাটসম্যান টেনে তোলেন তৃতীয় সেশনে। চা বিরতির আগে স্বপ্নের মতো একটি সেশন পার করে বাংলাদেশ দল। এ সেশনে ১২২ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে ব্যক্তিগত ফিফটির স্বাদ পান দুজনই। তবে সেখানেই থেমে যাননি লিটন-মুশফিক। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৭১ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল।
লিটন ৬২ ও মুশফিক ৫৫ রান নিয়ে তৃতীয় ও শেষ সেশনের খেলা শুরু করেন। তবে বিপদে হতে পারত ইনিংসের ৬৫তম ওভারে। ব্যক্তিগত ৬৭ রানে জীবন পান লিটন। আফ্রিদির করা বলে পুল করেন লিটন, বল সোজা মিড উইকেটে দাঁড়ানো সাজিদ খানের হাতে। কিন্তু তা লুফে নিতে ব্যর্থ হন সাজিদ।
জীবন পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাননি লিটন। ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। বাঁহাতি স্পিনার নুমান আলির করা ৭৮তম ওভারের তৃতীয় বল মিড অফে ঠেলে দিয়ে ছুঁয়েছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। পঞ্চাশ রানের সময় উদ্যাপন না করলেও সেঞ্চুরির পর ব্যাট তুলে সতীর্থদের অভিবাদনের জবাব দেন লিটন।
শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলী, নোমান আলী, সাজিদ খানরা হতাশায় পড়েন লিটন-মুশফিকের সাবলিল ব্যাটিংয়ের কাছে। এতে অপেক্ষা বাড়ল অভিষেক হওয়া ইয়াসির আলী রাব্বির। প্রথম সেশন থেকে দিনের বাকিটা সময় প্যাড পরে বসে থাকতে হলো তাকে। যদিও আলোক স্বল্পতার কারণে নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ওভার আগেই শেষ হয় প্রথম দিনের খেলা।
তৃতীয় ও শেষ সেশনটিও দারুণ কাটল স্বাগতিকদের। এই সেশনে ২৬ ওভার ব্যাট করেন লিটন-মুশফিক। কোনো উইকেট হারাতে হয়নি। দাপুটে ব্যাটিংয়ে দুজনের পার্টনারশিপ থেকে আসে অবিচ্ছেদ্য ২০৪ রান। যেখানে চট্টগ্রামে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিতে নাম তোলেন লিটন-মুশফিক, যা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষেও সর্বোচ্চ। আজ শনিবার লিটন ১১৩ আর সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা মুশফিক ৮২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।