লিটারে ৮ টাকা কমল সয়াবিন তেলের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগের নির্ধারিত দরের চেয়ে লিটারে বোতলজাত সয়াবিন তেল আট টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম সাত টাকা কমিয়েছে সরকার। গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মিল ও রিফাইনারি মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে নতুন এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ; যা আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

এ দর কবে থেকে কার্যকর হবে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘এই দাম আজ (সোমবার) থেকে মিল গেটে কার্যকর হবে। বাজারে কার্যকর হতে আরও ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগবে।’

গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘সয়াবিন তেল এক লিটারের পেট বোতলের নতুন দাম ১৬০ টাকা এবং ৫ লিটার ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খোলা তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৬ টাকা লিটার।’

পাম তেলের দাম এখনও ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ তেলের দাম ঠিক করতে আগামী ২২ মার্চ আবার রিফাইনারি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবে মন্ত্রণালয়। পাম তেলের বিষয়ে আমাদের আরও কিছু তথ্য ও হিসাব-নিকাশের বিষয় আছে। এই তেল ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে আসে। আসতে সময় কম লাগে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্ধিত যে দাম, সেই দামে অনেক তেল বাংলাদেশে চলে এসেছে। সেটা কীভাবে অ্যাডজাস্ট করা যায়, সে ব্যাপারে আমাদের রিফাইনারি সমিতির প্রতিনিধিরা সময় নিয়েছেন। আমরা ২২ তারিখে এটা ঠিক করব।’

এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১৬৮ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। আর খোলা তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে মার্চের শুরু থেকে আরও দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরবরাহ সংকটও তৈরি করা হয়। আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল গেট থেকে তেল সরবরাহ না দেয়ার অভিযোগ করা হয়। তখন সরকার নির্ধারিত আগের দামের চেয়ে লিটারে ২৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়।

দাম বেড়ে যাওয়ায় ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় খোলা সয়াবিন তেল অনেক জায়গায় মিলছিল না বলে খবর আসে। অনেক বাজারে তেলের বোতল খুলে খুচরায় খোলা আকারে প্রতি লিটার ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করা হয়।

এরপর সরকারের দিক থেকে দাম নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়ে। বাজারে অভিযানসহ তেল মজুদের জন্য জরিমানা করা হয় ব্যবসায়ীদের। সয়াবিন তেল সরবরাহ ও বিপণনের সব স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরবরাহ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন তেল পরিশোধনকারী কারখানায়ও সরেজমিন যান ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা।

এসব উদ্যোগে সরবরাহ সংকট কমে সব বাজারে আবার তেল মিলতে শুরু করে; দামও কিছুটা কমে। তবে তা আগের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি।

দেশের বাজার পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত দাম কমাতে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে ১০ শতাংশ ভ্যাট তুলে ৫ শতাংশে নামায় এবং বিপণন ও পরিশোধন পর্যায় থেকে ভ্যাট তুলে নেয়।

বাণিজ্য সচিব জানান, বর্তমানে বাজারে তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তেলের কোনো সংকট নেই।

নতুন দরে কবে থেকে তেল পাওয়া যাবেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, রিফাইনারি থেকে নতুন দামে তেল ছাড়া হবে সোমবার থেকে। বাজারে এটি কার্যকর হতে আরও ৫ থেকে ৭ দিন লাগবে।

তিনি বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে অ্যাডজাস্ট করতে কিছুটা সময় লাগে। কারণ কিছু তেল এখনও মার্কেটে আছে, বোতলের গায়ে এখনও দাম লেখা আছে। এজন্য বলে দিলেও কাল থেকে এটা (দাম কমানো) করতে পারবে না। এটা ৫ থেকে ৬ দিন লাগবে। আগামী ঈদ পর্যন্ত তেলের এই দাম কার্যকর থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে টিকে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার বলেন, এখন যে তেল আমদানি করা হয়েছে তার ট্যাক্স, ভ্যাট আগের হারেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। বাজারে তেলের দাম কমানোর ফলে ওই ট্যাক্স, ভ্যাট রিফান্ড করার অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এটার প্রতি সরকারকে একটু নজর দিতে বলব। তাহলে আমাদের এই লসটা হবে না। বাজারে সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত মজুত আছে। আশা করছি ঈদ পর্যন্ত তেলের কোনো ঘাটতি হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০