লিবরা ইনফিউশনের এমডি কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাওনা ঋণ পরিশোধ না করে উল্টো ব্যাংক কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লিবরা ইউফিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. রওশন আলমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। বেসরকারি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকির নন-এফআইআর মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কোম্পানির কারখানা থেকে লিবরা ইউফিউশনের কর্ণধারকে গ্রেফতার করে রূপনগর থানা পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে উল্টো ব্যাংক কর্মকর্তাকেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ২০১৫ সালে মতিঝিল থানায় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম জিডি করেন। তদন্তশেষে পুলিশ তা নন-এফআইআর মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ করে। এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানিশেষে আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে লিবরা ইউফিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. রওশন আলমকে গ্রেফতার করেছে রূপনগর থানা পুলিশ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি মূলধন জোগানো ও কারখানা সম্প্রসারণের জন্য ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় স্বল্প মূলধনি কোম্পানি লিবরা ইনফিউশন। কম্পোজিট বিনিয়োগ সুবিধার আওতায় ঋণ নিতে কোম্পানিটির রূপনগর শিল্প এলাকার ১৬৯ শতাংশ জমি, ওই জমির ওপর থাকা ৫২ হাজার ৮৭৭ বর্গফুটের একটি চারতলা ভবন, ১৪ হাজার ৬৪০ বর্গফুটের একটি পাঁচতলা ভবন, এক লাখ আট হাজার ১৬ বর্গফুটের একটি আটতলা ভবন ও কোম্পানির ২৭টি মেশিন ও ইক্যুইপমেন্ট ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হয়। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পরও কোম্পানির অবস্থার উন্নতি হয়নি। উল্টো ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে লিবরা ইনফিউশন। ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে লিবরা ইনফিউশনসের কাছে আসল, মুনাফা ও অন্যান্য চার্জসহ আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ব্যাংকের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দেওয়া হলেও কোম্পানিটি তা গ্রহণ করেনি। এর জের ধরে ২০১৫ সালের শেষদিকে অর্থঋণ আদালত আইন মেনে কোম্পানির বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের আদেশে নিলাম স্থগিত হয়ে যায়। খেলাপি ঋণ আদায়ের তাগিদ, মামলা ও নিলামের নোটিশ প্রদানের কারণে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লিবরার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্পর্কের অবনতি হয়, যা ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়া পর্যন্ত গড়ায়। প্রায় দুই বছর পর ওই মামলায় গ্রেফতার হলেন ড. রওশন আলম।

ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যমতে, ওই খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আলোচনার একপর্যায়ে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিমকে সেলফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেন লিবরার কর্ণধার ড. রওশন আলম। এ ঘটনায় দায়ের করা নন-এফআইআর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত মাসে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ মামলা ছাড়াও খেলাপি ঋণ ও চেক জালিয়াতির অভিযোগে লিবরা ইনফিউশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ১৩টি মামলা করেছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। সে মামলাগুলোও চলমান রয়েছে।

এদিকে রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানিয়েছেন, ‘ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি লিবরা ইনফিউশনের নামে ড. রওশন আলম আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখা থেকে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। খেলাপি ঋণ আদায়ে তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে খেলাপি আদায়কে কেন্দ্র করে ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিমের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ড. রওশন আলম ব্যাংক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। তদন্তশেষে ওই মামলার (৮৯/২০১৫) প্রতিবেদন দাখিলের পর ড. রওশন আলমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। নির্দেশনা অনুযায়ী ড. রওশন আলমকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

আলাপকালে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা জালাল আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়কে কেন্দ্র করে ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় লিবরা ইনফিউশনের এমডিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বকেয়া অর্থ আদায়েও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০