লুপাস আক্রান্ত নারীরা কি সন্তান নিতে পারবেন

সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথ্রোমেটোসিস বা এসএলই বা সংক্ষেপে লুপাস একধরনের অটোইমিউন রোগ। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) নিজের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে।

নানা অঙ্গে আক্রমণ করে বলে এই রোগের উপসর্গও বিচিত্র। যেমন গিরায় ব্যথা, ত্বকে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি, নাকের দুপাশে গালে প্রজাপতির ডানার মতো বিস্তৃত লাল দানা, মুখের তালুতে ঘা, চুল পড়া, জ্বর, হাত-পা ফোলা, মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অসংলগ্ন আচরণ, রক্তশূন্যতা ও রক্তকণিকা কমে যাওয়া, পেট-বুকে পানি জমাসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

সাধারণত ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মেয়েরাই লুপাসে আক্রান্ত হন। এ বয়সটি মেয়েদের প্রজননক্ষম সময়ও।

গর্ভধারণ কি ব্যাহত হয়: সাধারণত লুপাসের কারণে গর্ভধারণ ক্ষমতা ব্যাহত হয় না। কিন্তু রোগের তীব্রতা বেশি হলে এবং এর চিকিৎসায় ব্যবহƒত কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গর্ভধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।

সন্তান ধারণে ঝুঁকি: লুপাস-আক্রান্ত নারী গর্ভধারণ করলে তাকে হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। তবে কিছু নিয়মকানুন ও শর্ত পূরণ করে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।

সন্তান ধারণে পূর্বশর্ত: হঠাৎ সন্তান নেয়া যাবে না, যত দিন চিকিৎসক সন্তান ধারণের জন্য নিরাপদ ঘোষণা না করেন। সন্তান নেয়ার আগে অন্তত তিন মাস প্রেগন্যান্সিতে নিরাপদ, এমন কোনো ওষুধের ব্যবহার করে রোগটিকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রোগী ও পরিবারকে ঝুঁকি, গর্ভকালীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রসবের পরিকল্পনা ভালো করে বুঝে নিতে হবে।

গর্ভধারণে কি রোগ বাড়ে: সবার জন্য এমনটা নাও হতে পারে। তবে কারও গর্ভধারণের পর রোগের তীব্রতা বাড়তে দেখা যায়। এটা নির্ভর করে গর্ভধারণের আগে ও গর্ভধারণের সময় রোগ কতটা নিয়ন্ত্রণে ছিল তার ওপর। সুনিয়ন্ত্রণে থাকলে মাত্র সাত থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই সন্তান নিলে সেই হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ।

তীব্রতা বাড়লে করণীয়: গর্ভাবস্থায় রোগের তীব্রতা বাড়লে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা রিউমাটোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ খেতে হবে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও লুপাস বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে প্রতি মাসে একবার, তারপর ২৮ সপ্তাহের পর থেকে দুই সপ্তাহ পরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।

প্রসব ও পরবর্তী যতœ: লুপাস আক্রান্ত রোগীর প্রসব অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে হওয়া উচিত, যেখানে মা ও নবজাতকের চিকিৎসার সব সুবন্দোবস্ত আছে। প্রসব-পরবর্তী সময়েও কারও কারও রোগের তীব্রতা বাড়তে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নবজাতকের জন্য নিরাপদ এমন ওষুধ সেবন করে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।

অধ্যাপক রওশন আরা

মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ

গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০