লেখক পাঠক সম্পাদকদের পদচারণে মুখরিত রাবি ক্যাম্পাস

প্রতিনিধি, রাবি : দুই বাংলার লেখক-পাঠক ও সম্পাদকদের নিয়ে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘চিহ্নমেলা মুক্তবাঙলা’। দুদিনব্যাপীর দ্বিতীয় দিনে লেখক-পাঠক এবং পত্রিকার সম্পাদকদের আগমনে সরব হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস।

‘চিহ্নমেলা’ উপলক্ষে বিভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে রাবির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবন চত্বর। এ প্রাঙ্গণেই এবার ‘চিহ্নমেলা মুক্তবাঙলা-২০২২’ নামে বসেছে লেখক-পাঠক ও সম্পাদকদের এই বৈশ্বিক সম্মিলন। এতে সাহিত্যবিষয়ক ভারতের ৭০টি ও বাংলাদেশের ১০০টি ছোট কাগজ ও পত্রিকার কর্মী-সম্পাদক, লেখক-পাঠক অংশ নেন। ১৭০টি লিটলম্যাগ, ১০৫টি পত্রিকা, দুই শতাধিক স্টল ও পাঁচ শতাধিক লেখক-পাঠক-সম্পাদকের সম্মিলনে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাস চত্বরে।

প্রতি তিন বছর পরপর অনুষ্ঠিত এই মেলাকে ঘিরে লেখক-পাঠক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই। সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন তারা। তাদের কেউ কেউ দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা সাহিত্য পত্রিকার স্টলগুলো ঘুরে দেখছেন। কেউবা ব্যস্ত ছবি তোলায়। আর কেউবা দুই বাংলার প্রখ্যাত লেখক ও পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিভোর। এ যেন লেখক-পাঠক-সম্পাদকের মিলনমেলা।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, একদিকে একটি বড় মঞ্চ। এর চারদিকে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শতাধিক ছোট কাগজের স্টলের সারি। ‘কলকাতা কথকতা’ নামে একটি প্রদর্শনী স্টলও রয়েছে সেখানে। পশ্চিম দিকের বকুল গাছটিকে ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কুঁড়েঘর। সেখানে সাজানো রয়েছে ‘চিহ্ন’ পত্রিকার নানা সংখ্যা। এর ঠিক বিপরীতে দেশের প্রথম শহীদ মিনারটিকে ঘিরে সারি সারি রাখা হয়েছে বেশ কিছু চিত্রকর্ম। কাঠের ওপর অ্যাক্রেলিক রঙে আঁকা চিত্রগুলো। পুরো কুঞ্জটি সাজানো হয়েছে ত্রিভুজাকৃতির রঙিন কাগজে। সেই কাগজগুলোতে আঁকা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশসহ বাংলা সাহিত্যের গুণী সাহিত্যিকদের ছবি।

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসা ‘কলকাতা কথকতা’ নামক প্রদর্শনী স্টলটি ঘুরে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রধান প্রধান সংবাদ। রয়েছে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত বিভিন্ন বাংলা সিনেমার সিডি। এছাড়াও রয়েছে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক নোট, ডাকটিকিট, প্রাচীন সার্টিফিকেট ইত্যাদি।

প্রদর্শনীর বিষয়ে ‘কলকাতা কথকতা’র সংগ্রাহক ফাল্গুনী দত্ত রায় বলেন, ‘এবারের এ মেলায় আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় সম্পর্কিত দুর্লভ কিছু সংগ্রহ প্রদর্শন করছি, যা এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে।’

বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আজাদ সিয়াম। তিনি বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় এসেছি, বেশ ভালো লাগছে। সাহিত্য পত্রিকাগুলো দেখছি। দু-একটি কিনেছি। বেশ কয়েকটি পত্রিকার মৌলিক কিছু প্রবন্ধ ও কবিতা আমার ভালো লেগেছে। এর পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণের সৌন্দর্য আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। ছোট ছোট কাগজে লেখা বাক্যগুলো আমার হৃদয় ছুঁয়েছে।’

চিহ্নমেলার দুদিনব্যাপী এ আয়োজনে দেশ ও দেশের বাইরের দুই শতাধিক লিটলম্যাগ এবং পাঁচ শতাধিক লেখক-পাঠক ও সম্পাদকের সম্মিলন ঘটেছে। মেলার প্রথমদিনে আড্ডা, মুক্তভাষণ, গল্প ও কবিতা পাঠ এবং সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আজ দ্বিতীয় দিনও (১৮ অক্টোবর) বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা, গ্রন্থ ও পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন, প্রবন্ধ পাঠ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া সমাপনী সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০