মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিশ্বজুড়ে চলছে কভিড-১৯-এর তাণ্ডব। অন্যান্য দেশের মতো ভাইরাসটির কবলে পড়েছে বাংলাদেশও। এ কারণে ৬৬ দিন ধরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ ছিল দেশের পুঁজিবাজার।
এ সময়ে তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি। এ জন্য সবার ধারণা ছিল লেনদেন শুরু হলে এ খাতের শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এর উল্টোচিত্র। লেনদেন শুরুর দিন এই খাতটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আগ্রহ লক্ষ করা গেলেও পরবর্তী দুই কার্যদিবসে বিনিযোগকারী টানতে ব্যর্থ হয়েছে খাতটি।
গত মঙ্গলবার লেনদেনের তৃতীয় দিনে শুরু থেকেই তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কোম্পানির মতো এই খাতের শেয়ারের দর কমতে থাকে। পরবর্তীকালে অন্যান্য খাতের কোম্পানির শেয়ার চাহিদা কিছুটা বাড়লেও এই খাতের শেয়ারের কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। দিন শেষে তালিকাভুক্ত ৩২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বেক্সিমকো সিনথেটিক, কেয়া কসমেটিকস ও রেকিট বেনকিজার।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ খাতের শেয়ারের দর কমার কোনো কারণ নেই। এমনিতেই তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কোম্পানির চেয়ে এ খাতটির বেশিরভাগ কোম্পানিরই লভ্যাংশ প্রদানের হার বেশি। মুনাফায়ও এগিয়ে কোম্পানিগুলো। নিয়ম অনুযায়ী, লকডাউনের সময় এসব কোম্পানি উৎপাদনে থাকার ফলে অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় এসব কোম্পানির মুনাফা বেশি হওয়ার কথা। কারণ এই সময়টাতে অন্যান্য কোম্পানির উৎপাদনই ছিল না।
তারা বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী কোম্পানির মুনাফা বা আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করে না। তারা বিনিয়োগ করতে ভালোবাসেন গুজবে কান দিয়ে। ফলে তারা বেশিরভাগ সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করা। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তা দেখা যায় না। তারা অন্য কারও কথায় বা গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করেন। তাদের এ ধরনের লেনদেনের কারণে অনেক সময় ভালো শেয়ারের চাহিদা থাকে না।
এই প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন পর লেনদেন চালু হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। ফলে বাজারের আসল চিত্র দেখতে কিছুটা সময় লাগবে। এখন বাজারের যে পরিবেশ রয়েছে তাতে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করা যায়।
লকডাউনের সময় ওষুধ ও রসায়ন খাতের পাশাপাশি সিমেন্ট ও স্টিল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর উৎপাদন সচল ছিল। একইভাবে টেলিকম খাতের কোম্পানিগুলোর সেবাও সচল থাকতে দেখা যায়।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কারণে এমনিতেই তারা লোকসানে রয়েছেন। তার ওপর দুই মাসের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকায় তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এ জন্য তারা অনেক ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করছেন।
এ প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো নয়। তার ওপর করোনাকালে লেনদেনও বন্ধ ছিল। এতে লোকসানের পাশাপাশি আমাদের আয়ও কমে গেছে। ভেবেছিলাম লেনদেন শুরু হলে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ দেখা যাবে। এখন দেখছি এর উল্টো। ফলে লেনদেন করতে বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের।