Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:09 am

লেনদেনে সাময়িক স্বস্তির পর মন্দায় বাজার!

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে প্রায় দেড় বছর পর তুলে নেয়া হয় ফ্লোর প্রাইস। এতে লেনদেনে সাময়িক গতি ফিরে। কৃত্রিমভাবে বাজারকে চাঙা রাখার নানা কৌশলও অনুসরণ করা হয়। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কয়েকদিন যাওয়ার পরই প্রকৃত রূপে ফেরে দেশের পুঁজিবাজার। অধিকাংশ কোম্পানির দরপতন হওয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক (ডিএসইএক্স) কমেছে। পাশাপাশি বাজার মূলধনও হ্রাস পেয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে বাজারে মন্দার ছাপ পড়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ১৮ জানুয়ারি এক নির্দেশনায় ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেয়, যা ২১ জানুয়ারি কার্যকর হয়। ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেয়ার পরবর্তী দুই মাসের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ কোটি টাকা। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া কার্যকর হওয়ার আগের কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ গতকাল বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৭২ কোটি ৮ লাখ টাকা।

গত দুই মাসে পুঁজিবাজারে গড় শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৩১ কোটি ১৭ লাখ, যা পূর্ববর্তী দুই মাসের প্রায় দ্বিগুণ। আগের দুই মাসে গড় শেয়ার হাতবদল হয়েছিল ১৬ কোটি ৪৭ লাখ। এতে গত দুই মাসে টাকার অঙ্কে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৮৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, পূর্ববর্তী দুই মাসে যা ছিল ৫১৩ কোটি

৫ লাখ টাকা। এ হিসেবে গড় লেনদেন বেড়েছে ৪৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এর মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়ার পরের কার্যদিবস থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে লেনদেন। গতকাল সর্বশেষ ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এ হিসাবে সর্বশেষ লেনদেন ফ্লোরপ্রাইস তুলে দেয়ার আগের দুই মাসের গড় লেনদেনের চেয়েও কম। একই সঙ্গে এই সময়ে দরপতন ঘটতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপতনে কমতে থাকে প্রধান মূল্য সূচক।

এই দুই মাসে ৪১ কার্যদিবসের মধ্যে ২৫ কার্যদিবসেরই সূচকের পতন ঘটে। আর শেষ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৪ কার্যদিবস সূচকের উত্থান ঘটে। এই দুই মাসের ব্যবধানে সূচক ৪৬৪ দশমিক ১৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮৭২ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে নেমে আসে। যদিও এর আগের ১১ ফেব্রুয়ারি সূচক ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪৪৭ দশমিক ০৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়, যা ছিল ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত দুই মাসে ৪২০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৭০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি ঘটে। আর ২২ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত থাকলেও ৩২৮টির দর পতন হয়েছে।

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ায় পরবর্তীতে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এতে বাজারে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়, যা পরবর্তীতে আগের অবস্থানে নেমে আসে। এছাড়া বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হলে কোম্পানিগুরোর দরপতন হয়। এছাড়া দেশের বাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রিতে প্রভাবিত করছে। তবে তাদের মতে, বাজারে উত্থানপতন যাই ঘটুক, বাজারের গতিতে চলতে দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক ড. আল-আমীন শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজারের উত্থান-পতনের অধিকাংশই প্রভাবিত করে থাকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যাদের অধিকাংশই স্বল্প মেয়াদে মুনাফা তুলতে চায়। কোম্পানি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে, আর এই সুযোগ নিয়ে থাকে কালোবাজারি চক্র। এক্ষেত্রে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও যৌক্তিক আচরণ করতে হবে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবার প্রতি সমান আচরণ প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব সিকিউরিটিজের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। এরপর গত ২২ জানুয়ারি নতুন করে আরও ২৩ কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়। তৃতীয় দফায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি আরো ছয় কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়। এখন কেবল বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক, খুলনা পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও শাহজিবাজার পাওয়ারের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস বহাল আছে।