লেনদেন ও সূচক কমার মধ্যদিয়ে অর্থবছর শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ও লেনদেন পূর্বের বছরের চেয়ে কমেছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধ ভালো চললেও আর্থিক খাতের নৈরাজ্যের প্রভাবে দ্বিতীয়ার্ধে পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচকের পতন হয়েছে।
বৈচিত্র্যময় নতুন পণ্য চালু, মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও বাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোই আগামী দিনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি ও ৭৫টি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের চুক্তিকে গত অর্থবছরের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে ডিএসই।
দেশের দুই পুঁজিবাজারেই অর্থবছরের শেষ লেনদেন ছিল গতকাল। গত এক বছরে ডিএসইর সূচক ও লেনদেন পূর্বের অর্থবছরের তুলনায় সবচেয়ে কমেছে। তবে বাজার মূলধন কিছুটা বেড়েছে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে গত অর্থবছরের সার্বিক বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম স্টক এক্সচেঞ্জ চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় ডিএসই এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভিত পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও মজবুত হয়েছে।’ তবে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি ও নতুন পণ্য বাজারে যুক্ত করে দেশের পুঁজিবাজারকে বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনের প্রতিষ্ঠানসমূহের অর্থায়ন ও তালিকাভুক্তির জন্য স্মল ক্যাপ বোর্ড গঠনে জনমত যাচাই করার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওটিসি মাকের্টের জন্য নতুন বাজার কাঠামো তৈরি ও আলাদা রেগুলেশন অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ওভার দ্য কাউন্টার বুলেটিন বোর্ড) রেগুলেশন, ২০১৭ নামে খসড়া তৈরি করে বিএসইসির কাছে জমা দিয়েছে।
ন্যাশনাল ক্লিয়ারিং কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কোম্পানি নিবন্ধনের কার্যক্রমও প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। সেসঙ্গে জাতিসংঘের সাসটেইন্যাবল স্টক এক্সচেঞ্জের উদ্যোগে যুক্ত হতে প্রতিশ্রুতি পত্রে স্বাক্ষর করেছে ডিএসই। বিশ্বের ৭৫টি স্টক এক্সচেঞ্জ এক সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে। ডিএসই মোবাইল অ্যাপে বেশকিছু সিকিউরিটি ফিচার সংযোজন করা হয়েছে। নতুন প্রোডাক্ট এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড চালুর প্রক্রিয়াও এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
আইপিও: ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজার থেকে দুটি মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট ১১টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে মোট ৫৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এরমধ্যে তিনটি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৭৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর আগের বছরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিনটি মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে মোট ৩৯০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছিল।
তালিকাভুক্তি : ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুটি মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ ৬৭৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। অপরদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিনটি মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ ৯০৫ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়।
রাইট শেয়ার ইস্যু: ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তিনটি কোম্পানি ৩৩ কোটি সাত লাখ রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ৩৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ৬২ কোটি ১৯ লাখ টাকা মূলধন উত্তোলন করে। আগের বছর ৪টি কোম্পানি ৮৫ কোটি ৮১ লাখ রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করেছিল এক হাজার ৪১ কোটি ৯৭ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ মূলধন উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১৮৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লেনদেন: ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা পূর্বের অর্থবছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা ২১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা কম।
ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স): ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫০ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বা চার দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষদিনে ৫৪০৫ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এ সময়ে ডিএসইএক্স মূল্য সূচক সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৩৩৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে ও সর্বনিম্ন ছিল পাঁচ হাজার ৪৮৮ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে।
অন্যদিকে ডিএসই-৩০ সূচক (ডিএস৩০) ১২৩ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা পাঁচ দশমিক ৯৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে গতকাল দাঁড়ায় ১৯৫৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডিএস৩০ মূল্য সূচক সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৪ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে উন্নিত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল এক হাজার ৯৪১ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। একই বছর ডিএসইএক্স শরিয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) ৩২ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৫৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে এক হাজার ২৬৩ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (ডিএসইএস) মূল্য সূচক সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৩৩ দশমিক ১৭ পয়েন্টে উন্নিত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল এক হাজার ২২৮ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।
তবে সূচক সামান্য কমলেও ডিএসইর বাজার মূলধন পূর্বের অর্থবছরের তুলনায় ৪৬ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন টাকা বা এক দশমিক ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তিন হাজার ৮৪৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। ডিএইতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজসমূহের মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৯৫, যা এর আগের বছরে ১৫ দশমিক ৭৪ ছিল।
বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের লেনদেন: ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ৭২৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এক হাজার ৭১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। ডিএসই-মোবাইল অ্যাপ চালুর পর লেনদেন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার ২৭০ জনে।
ওটিসি মার্কেট: ওটিসি মার্কেটের লেনদেন আগের বছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরে ওটিসি মার্কেটে মোট এক কোটি ৩৭ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়। যার মূল্য টাকায় ৭৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ওটিসি মার্কেটে বর্তমানে ৬৫টি কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি কোম্পানি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে লেনদেন হয়।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০