মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: টানা উত্থানের পর সম্প্রতি পুঁজিবাজারে হঠাৎ সূচকের পতন দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে কমছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ও বাজার মূলধন। এর জের ধরে কমে গেছে লেনদেন। প্রায় ছয় মাস পর লেনদেন নেমে এসেছে এক হাজার কোটি টাকার ঘরে। এতে কপালে ভাঁজ পড়ছে ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের। কারণ লেনদেন কমে গেলে হাউস মালিকদের আয় কমে যায়। ফলে হাউসের ব্যয়ভার মেটাতে বেগ পেতে হয় তাদের।
সাম্প্রতিক বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে গড়ে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি হচ্ছে। এর আগে নিয়মিত লেনদেন ছিল দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু হঠাৎ লেনদেন কমে এক হাজার কোটি টাকায় চলে এসেছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয় এক হাজার ৬৮ কোটি টাকা। এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ব্রোকারেজ হাউস মালিকরা। লেনদেনের সঙ্গে তাদের ব্যবসার সম্পর্ক থাকাই এ চিন্তার কারণ। তাদের শঙ্কা, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবসা হুমকিতে পড়বে।
সময়ের বিবর্তনে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার লেনদেন ১০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। পরবর্তীকালে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে লেনদেন বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে লেনদেন আবার এক হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। হাউস মালিকরা জানান, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তা অব্যাহত থাকলে তাদের অবস্থা আরও করুণ হবে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এক বছর আগেও গচ্ছা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নিতে হয়েছে। তখন হাউস চালাতে না পারায় অনেকে তা ছোট করে ফেলেছেন। করতে হয়েছে কর্মী ছাঁটাই।
তিনি আরও বলেন, চাপ সামলাতে না পেরে আমি নিজেই সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুটের অফিস ছেড়ে দিয়ে এক হাজার ১০০ বর্গফুটের অফিসে নিতে বাধ্য হই। পরবর্তীকালে লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা ব্যবসায় ফিরে এসেছি। কিন্তু বর্তমানে লেনদেন কমে যাওয়ায় আমরা চিন্তায় পড়েছি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইতে ইতিহাসের রেকর্ড লেনদেন হয়, যার পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। ওই সময় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয় ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় কিছু হাউস থেকে এ সময় প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু সেই সময়ের ধসের পর থেকে বাজার পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। কমতে থাকে লেনদেন, যার জের ধরে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয় কমতে থাকে। বাধ্য হয়ে হাউস মালিকরা কর্মী ছাঁটাই করতে থাকেন। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েন। কেউ কেউ ব্রোকারেজ হাউস বিক্রিও করে দেন। বর্তমানে কিছু বড় হাউস ছাড়া অন্যদের লেনদেন অনেক কম। যদিও ২০১০ সালের পর মিউচুয়াল ফান্ড ও কোম্পানি মিলে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তবে এর কোনো প্রভাব লেনদেনে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, লেনদেন ও বাজার মূলধন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতি। বিভিন্ন কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ না থাকা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ না থাকার কারণে বাজার ভালো হচ্ছে না। এতে বিদেশিরাও বাজার ছেড়ে যাচ্ছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও দিন দিন আস্থা হারাচ্ছেন।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বলেন, এখনও তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারে এখনও বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে পারলে এখান থেকে ভালো মুনাফা বের করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আশা করা যায় সামনের দিনগুলোয় পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে। বাজার ভালো হলে এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাই ভালো থাকবেন।