প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন বিনিয়োগকারীর নিজের পছন্দমতো শেয়ার কেনার অধিকার আছে। যারা শেয়ার কিনছেন তাদের অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্যটা কী? তারা ইনসাইডার কি না বা দর বাড়িয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে কি না। বিএসইসির দেখা উচিত, কোনো কোম্পানির সঙ্গে তাদের যোগসাজশ আছে কি না? একই সঙ্গে নামে-বেনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট আছে কি না বা এমনভাবে ট্রেড করছে যাতে শেয়ার দাম বেড়ে যাচ্ছে কি না। এগুলো নজরদারি করা উচিত। এছাড়া বর্তমানে লেনদেন কম হলেও বাজারের সব নির্দেশক ইতিবাচক। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ নুরুল আমিন এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেটের সিইও এমরান হাসান।
মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতায় বলে ডিসেম্বর মাসে মার্কেট একটু ধীরগতির হয়। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। মার্কেট এখন ভালো অবস্থানেই আছে। যদি সূচকের দিকে তাকান। মার্কেট ইল্ড বলে একটি কথা আছে, মার্কেট ইল্ড এখন ২.০১ শতাংশ প্রায়। আরেকটি হিসাব হচ্ছে আরএসআই। আরএসআই ৭০-এর নিচে যত কম থাকবে তত ভালো। এটি এখন ৪৭-এর নিচে অবস্থান করছে। মাকের্টের গড় পিই রেশিও ১৬ পয়েন্ট প্রায়। আর ব্যাংক খাতের পিই (প্রাইস আর্নিং) রেশিও ১১ পয়েন্ট। সবকিছু ইতিবাচক থাকার পরও বাজারের গতি ধীর। তবে ডিসেম্বর মাসে ধীরগতি থাকার কারণ অধিকাংশ কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে জুনে। জুনের হিসাব শেষ করে তারা ইতোমধ্যে ডিভিডেন্ড, বোনাস প্রভৃতি দিয়েও ফেলেছেন। অন্যদিকে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক খাতের হিসাববছর শেষ হবে ডিসেম্বরে। এরা মার্কেটের খেলোয়াড় বা টাকার জোগানদাতা। ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিও রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ মূলধন বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে অনেকেই সেটা করেছে। সব মিলিয়ে আমি বলব, বাজারে কোনো নির্দেশকই নেতিবাচক নয়। তা সত্ত্বেও ডিসেম্বরে স্বাভাবিকভাবেই বাজার ধীরগতিতে চলে। আমার মনে হয়, জানুয়ারিতে মার্কেট ভালো হবে। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে কিন্তু হরতালেও লেনদেন হয়। তার মানে এর চাহিদা আছে। নির্বাচনের বছর হলেও খুব একটি প্রভাব পড়বে না মার্কেটে। সব মিলিয়ে বলা যায়, গতকালের লেনদেন কম হলেও অন্য সব নির্দেশক ইতিবাচক ছিল। তিনি আরও বলেন, বাজারে যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড এদের মার্কেটে ফুলটাইম থাকার কথা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মার্কেটে এলে ভলিউম বাড়ে এবং অন্যরাও লেনদেনে উৎসাহিত হয়।
এমরান হাসান বলেন, মার্কেট বর্তমানে কিছুটা দুর্বল অবস্থানে আছে। ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে ছিল। এ সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৩০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছিল। এর পর থেকে ধীরে ধীরে সংশোধন হয়েছে। যখন বাজারে সংশোধন হয় বা কার্যক্রম কমে আসে বা টার্নওভার কমে যায়, তখন বড় বা ব্ল– চিপ কোম্পানিগুলোর দিকে বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ কমে যায়। বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তখন ছোট কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, একজন বিনিয়োগকারীর শেয়ার কেনার অধিকার আছে। আমাদের দেখা উচিত, যারা শেয়ার কিনছেন তাদের অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্যটা কী? তারা ইনসাইডার কি না বা দর বাড়িয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে কি না? একজন বিনিয়োগকারী যদি বেশি দামে শেয়ার কিনতে চান, এটা তার অধিকার। বিএসইসির দেখা উচিত, তাদের কোনো কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশ আছে কি না। একই সঙ্গে নামে-বেনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট আছে কি না বা এমনভাবে ট্রেড করছে যাতে শেয়ারের দাম বেড়ে যাচ্ছে কি না, এগুলো নজরদারি করা উচিত। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যে ধস হয়েছিল সে সময়ে অনেক শেয়ারের দাম যে অবস্থানে নেমে গিয়েছিল, তাতে বিনিয়োগকারীরা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, গত পাঁচ থেকে ছয় বছরেও সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি।