মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: করোনাকালে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে লেনদেন খরা। বিনিয়োগকারীশূন্য এ বাজারে প্রতিনিয়ত লেনদেনে অবনতি দেখা যাচ্ছে। বাজারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন সাধারণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী উভয়েই, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে বাজারে। ধারাবাহিকভাবে কমছে লেনদেন।
গতকাল তা আরও নিচে নেমে গেছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ৩৮ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট বেচাকেনা হয়েছে, যা গত ১৩ বছর দুই মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম লেনদেন।
এর আগে ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল ডিএসইতে ৩৭ কোটি ৬৯ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। সম্প্রতি (৪ জুন) ডিএসইতে লেনদেন নেমে আসে ৪২ কোটি ৯৭ লাখ টাকায়। পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় গতকাল তা আরও নিচে নেমে যায়।
গতকাল ৩৮ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে মূল মার্কেটের লেনদেন ছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকা। লেনদেনের পাশাপাশি উন্নতি নেই সূচকেও। সম্প্রতি সূচক বাড়ছে এক থেকে দুই পয়েন্ট করে। গতকালও দুই পয়েন্ট বেড়ে সূচকের অবস্থান হয় তিন হাজার ৯৬২ পয়েন্ট।
এদিকে লেনদেন কমে যাওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীরা করোনা মহামারিকে যতটা না দুষছেন তার চেয়ে বেশি দায়ী করছেন ফ্লোর প্রাইসকে। মূলত ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার কারণেই লেনদেনের এই করুণ অবস্থা বলে মনে করছেন তারা। এতদিন বাজারসংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও এখন অনেকেই বিষয়টিতে ঐকমত্য পোষণ করছেন। তারাও চাচ্ছেন ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হোক। কারণ দিন যতই যাচ্ছে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ততই ভিন্ন রকমের হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বাজার বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায়, ফ্লোর প্রাইসে দর আটকে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকেছেন ব্লক মার্কেটের দিকে। গতকালও এই ব্যতিক্রমী চিত্র পরিলক্ষিত হয়নি। মোট ৩৮ কোটি টাকা লেনদেনের মধ্যে ব্লক মার্কেটেই লেনদেন হয়েছে আট কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়ার শেয়ার লেনদেন হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার। এছাড়া আরও ১৭টি প্রতিষ্ঠানের তিন কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হতে দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক বাজারে ফিরে যাওয়াই ভালো। কারণ ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। ফলে তারা শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ারও ক্রয় করতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে তাদের পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনতে পারছেন না, যে কারণে তাদের ইনকামের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক বাজার থাকলে তারা ভালো-মন্দ বিচার করে এক শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। অন্যদিকে লেনদেন কমে যাওয়ার কারণে ব্রোকারেজ হাউস মালিকেরা যে আর্থিক সমস্যার মুখে পড়েছেন, তারা কিছুটা হলেও নিষ্কৃতি পাবেন। বিষয়টি বিবেচনা করে নীতিনির্ধারকেরাও এটি নিয়ে ভাবছেন। অচিরেই হয়তো ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে আগের অবস্থায় পুঁজিবাজারকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন তারা।
এদিকে গতালের লেনদেন চিত্র দেখলে বোঝা যায়, নির্দিষ্ট কোনো খাতের শেয়ারেই চোখ ছিল বিনিয়োগকারীদের। মূল মার্কেটে যে লেনদেন হয়েছে সেখানে কিছুটা চাহিদা দেখা গেছে ব্যাংক, ওষুধ ও রসায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং প্রকৌশল খাতের শেয়ারের।