শেয়ার বিজ ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কার্যদিবসে দেশের পুঁজিবাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা গেলেও লেনদেনে গতি বেড়েছে। প্রায় দুই বছর পর গতকাল রোববার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দুই হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় স্থান হয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের।
অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান স্থান করে নেয়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে হাসিনা সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই সূচক বাড়ল।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান। হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এ সরকারের অধীনে আজই পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন হয়েছে। এদিন বাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের শুরুতেই ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ২০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ২৯১ পয়েন্ট।
কিন্তু এরপরই হঠাৎ একশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে।
মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৯ পয়েন্ট কমে যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে বাজারে আবার ক্রেতা ফিরে আসে। বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ে। ফলে মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী থেকেই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে ২৮টি ব্যাংকের শেয়ার দাম বেড়েছে এবং পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ার দাম কমেছে।
বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ার কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯১ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ১৮৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ১০ কোটি আট লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৬০৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৪০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ২০ আগস্টের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৬২ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬০ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑরবি, সিটি ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
এদিকে সিএসই’র সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৮২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া ২৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।