লেনদেন বাড়লেও কমেছে সূচক ও বাজার মূলধন

সাইমউল্লাহ সবুজ: ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা পুঁজিবাজার খুঁড়িয়ে চলছিল। এ কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বাজারটিতে লেনদেন নেমেছিল তলানিতে। বাজারে দরপতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইসের মতো পদক্ষেপ নিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে জাতীয় দ্বাদশ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়। এতে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উত্থান-পতন ঘটে, বাজারটিতে দিনের লেনদেন ছাড়িয়ে যায় হাজার কোটি টাকা। শেয়ার হাতবদলের সংখ্যা বাড়ে কয়েকগুণ। অন্যদিকে সূচকের বড় ধরনের পতনের পাশাপাশি বাজার মূলধন হারিয়েছে পুঁজিবাজার।

তথ্যমতে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পরের ১০ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গড় লেনদেন হয়েছে ৯৪৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার আগের ১০ কার্যদিবসে ছিল ৬১৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩২৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। একইভাবে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পরবর্তী ১০ কার্যদিবসে গড়ে ৩০ কোটি ৪৯ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা আগের ১০ কার্যদিবসে ছিল গড়ে ১৭ কোটি ১৭ লাখ শেয়ার। যদিও আলোচ্য সময়ে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৭ কোটি টাকায়। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১২২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট কমে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজার মূলধন কমলেও টার্নওভার বৃদ্ধি বাজারের জন্য ইতিবাচক, যা পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অপরিহার্য। তবে বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি ভালো হলে পুঁজিবাজারও ভালোর দিকে যাবে।

গত ১৮ জানুয়ারি পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় বিএসইসি। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়, যা ২১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। তাতে ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক  ডিএসইএক্স ৯৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। যদিও লেনদেন শুরুর প্রথম ৫ মিনিটে সূচকটি ২১৫ পয়েন্ট কমে যায়। পরে নানা উদ্যোগ নিয়ে এই সূচকের বড় পতন ঠেকায় পুঁজিবাজার। সেদিন ডিএসইর প্রধান সূচকটি দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯৬টির দরপতন হয়েছে, দাম বাড়ে ৫৪টির। অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির দাম। যদিও দিনের শুরুতে মাত্র ৩টির দাম বেড়েছিল, কমেছিল ৩০০-এর বেশি শেয়ারের দাম। পরের কার্যদিবসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে সব মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে প্রায় ছয় মাস পর ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। এমন পরিস্থিতিতে ২২ জানুয়ারির লেনদেন শেষে আরও ২৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি।

আলোচ্য ১০ কার্যদিবসের মধ্য চার কার্যদিবসে সূচকের পতন হলেও বাকি দিনগুলোয় সূচকের উত্থান হয়েছে। এর মধ্য টানা তিন কার্যদিবসে সূচকের পতনে ডিএসইএক্স সূচক ১৯৭ দশমিক ১৮ পয়েন্ট হারিয়েছিল। যদিও শেষ চার কার্যদিবসে সূচক ইতিবাচক ধারায় ছিল। এই সময়ে সূচক বেড়েছে ১৩৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট। এর মধ্যে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত ৩৯৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭১টির, কমেছে ৭১টির। ২০২২ সালের ১ জুনের পর এক দিনে এত সংখ্যক শেয়ারের দাম আর বাড়েনি। ওইদিন ডিএসইতে ২৮১টি শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৫১টির দর কমেছিল। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিতে ভর করে এদিন ডিএসইএক্স সূচক ৬০ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২১৩ পয়েন্টে উঠেছে।

পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফ্লোর প্রাইস হচ্ছে এমন একটা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বনিম্ন বেঁধে দেয়া হয়। ফলে কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের বেঁধে দেয়া দামের নিচে নামার সুযোগ থাকে না। বর্তমানে বাজারে আরও ১২টি কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ রয়েছে। সেগুলো হলো আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বা বিএটিবিসি, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক, খুলনা পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মা, রেনাটা, রবি ও শাহজিবাজার পাওয়ার।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০