লেনদেন মন্দাভাবে কমছে ভোগ্যপণ্যের দাম

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের বিভিন্ন পাইকারি দোকান ও আড়তে সয়াবিন, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, এলাচসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, বাজারে বাকিতে লেনদেন বন্ধ, ব্যাংক লেনদেনে নগদ টাকা উত্তোলনের সীমা তিন লাখ টাকা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাÑএসব কারণে গত কয়েক দিন ধরে ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে।

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরে ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে লেনদেনও সীমিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া ব্যবসায়িক দায় পরিশোধের চাপেও অনেকেই নগদে কম দামে পণ্য বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসবের প্রভাবে চলতি সপ্তাহে পাইকারিতে আরও দাম কমতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম নিম্নমুখী। পাম অয়েলের দাম কমে বর্তমানে বেচাকেনা হচ্ছে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চার হাজার ৮৫০ থেকে চার হাজার ৯০০ টাকায়। গতকাল সয়াবিনের দাম ছিল মণপ্রতি পাঁচ হাজার ৮০০ টাকা। মানভেদে গমের দাম কমে মণপ্রতি এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়েছে। আগের সপ্তাহগুলোয় পাইকারিতে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চিনির দাম ছিল ছয় হাজার ৩০০ টাকা।

বর্তমানে দাম কমে ছয় হাজার টাকার নিচে বেচাকেনা হচ্ছে। গতকাল মসুর ডালের দাম কেজিপ্রতি তিন-চার টাকা কমে ১২২-১২৩ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। মুগডালের দাম কমেছে কেজিপ্রতি পাঁচ-সাত টাকা। গতকাল প্রতি কেজি মুগডাল ১৩২-১৬০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। অন্যদিকে মটর ডালের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা কমে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে ভারতের বিকল্প কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু ও সরবরাহ বেশি থাকায় পেঁয়াজের দামও কমছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশি ও ভারত থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৮৮-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গতকাল ভারত ও দেশি পেঁয়াজ ছাড়া বিকল্প দেশগুলো থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। মসলাজাতীয় পণ্য এলাচ বিক্রি দুই হাজার ৫০০ টাকা, এক মাস আগে কেজিপ্রতি চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

অধিকাংশ পাইকারি দোকানদার বলেন, আস্থার সংকটে এখন বাকিতে বিক্রি হচ্ছে না। আর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া লেনদেন আরও কমেছে। ফলে লেনদেন কমছে। বাজারে একটা মন্দাভাব চলছে। এছাড়া চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সংকট আরও বাড়বে।
খাতুনগঞ্জ এলাকার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, নানা কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে। এর মধ্যে ব্যাংক লেনেদেন বড় কারণ। সব ব্যবসায়ী চেক নেন না। অনেককে নগদ টাকা দিতে হয়। এখন ব্যাংক থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র তিন লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে ছিল দুই লাখ টাকা। অথচ আমাদের দিনে অনেক নগদ টাকা লাগে। এখন লেনদেন কেবল ব্যাংক থেকে ব্যাংকে করা যাচ্ছে। চেকের মাধ্যমে দেয়া যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

বড় একটি শিল্পগ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় কাঁচামাল সরবরাহকারীদের
টাকা দিতে সমস্যা হচ্ছে। ছোট বিক্রেতা ও স্থানীয় ডিলারদের অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাদের নগদ টাকা দিতে হয়। টাকা তোলায় সীমাবদ্ধতা থাকায় নগদ অর্থের সংকটে আছি। আমাদের যে পরিমাণ নগদ টাকা দরকার তা তুলতে পাচ্ছি না। আবার যারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন তাদের পুরো টাকা দিতে পারছি না। আমি শ্রমিকদের এই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বলেছি, কারণ এখন নগদ টাকা তোলার উপায় নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০