প্রাণী সংক্রমিত রোগ লেপটোস্পাইরোসিস। একে ‘ফিল্ড ফিভার’ও বলা হয়। এছাড়া ‘৭ দিনের জ্বর’ কিংবা ওয়েল’স ডিজিজ নামেও পরিচিত এটি। লেপটোস্পাইরা প্রজাতির জীবাণু এ রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। গৃহপালিত প্রাণী, যেমন- গবাদিপশু ও কুকুরের মূত্রের মাধ্যমে এ জীবাণু মাটি ও পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। ইঁদুর কিংবা শূকরের মাধ্যমে ছড়াতে পারে রোগটি।
১৮৮৬ সালে বিজ্ঞানী এডলফ ওয়েল সর্বপ্রথম জাপানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করতে গিয়ে প্রথম এ রোগের জীবাণু ধরা পড়ে। যদিও ধারণা করা হয়, আগে থেকেই এ রোগের জীবাণু বাংলাদেশে ছিল। তবে সঠিক রোগ নির্ণয় ও যথাযথ
পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাবে এ রোগ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া কিংবা মস্তিষ্ক ঝিল্লির প্রদাহ হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া হতো। বিশ্বে প্রতি বছর সাত থেকে ১০ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়, যাদের অধিকাংশই মারা যায়। শতাংশের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ কিংবা কোনো উপসর্গ না দেখা দিলেও বাকি ১০ ভাগের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
সাধারণত এ রোগের জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করার ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ তৈরি করে।
# কাঁপুনি দিয়ে জ্বর
# তীব্র মাথা ব্যথা
# মাংসপেশিতে ব্যথা। বিশেষ করে পা ও শরীরের পেছনের মাংসপেশি
# চোখ লাল হয়ে যাওয়া
# পেট ব্যথা
# বমি ও ডায়রিয়া
এসব উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে উপরোক্ত উপসর্গ ভালো হয়ে যাওয়ার তিন থেকে চার দিন পর জীবাণুটি মস্তিষ্কের আবরণী, মস্তিষ্ক, যকৃত, কিডনি ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে নতুন উপসর্গ তৈরি করে। এসব উপসর্গ হচ্ছে
# পুনরায় উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর ও সঙ্গে মাথাব্যথাও থাকবে
# ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
# শারীরিক দুর্বলতা ও কাজে অমনোযোগী
# আলোর ব্যাপারে আতঙ্ক
# খিঁচুনি
# জন্ডিসও হতে পারে
# রক্তবমি
# পায়খানার সঙ্গে রক্ত বের হওয়া
# নাকসহ শরীরের অন্য জায়গা থেকে
রক্ত পড়া।
এছাড়া ফুসফুস আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও কিডনি আক্রান্ত হলে ‘কিডনি ফেইলিউর’ হতে পারে। বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এখনও খুব বেশি নয়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। তাছাড়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি হওয়ায় এ রোগ সম্পর্কে এখনই সচেতন হওয়া দরকার।