রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: চলতি বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি ন্যায্য দাম পাওয়ায় লেবুচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
ভালো ফলন ও বাজারে লেবুর চাহিদা থাকায় এ ফসল চাষে ঝুঁকছেন ঈশ্বরগঞ্জের কৃষকরা। তাই প্রতি বছর লেবু চাষে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। স্বল্প পুঁজি নিয়ে লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্ব দূর করেছেন অনেক যুবক।
ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লেবুর অনেক জাতের চাষ হচ্ছে এ উপজেলায়। এর মধ্যে কাগজি, পাতি, এলাচি, বাতাবি ও হাইব্রিড নতুন জাতের সিডলেস (বীজহীন) লেবু অন্যতম।
বিলরাউল গ্রামের লেবু কৃষক আনোয়ারুল কাদির বলেন, কৃষি অফিসারের পরামর্শে ৪০ শতক পতিত জমিতে বাগান করেছি। বর্তমানে লেবু বিক্রি করে পরিবারের ভরণপোষণের চাহিদা মেটানোর পরও বাড়তি আয় থাকে। চলতি বছর ভালো দাম পেলে বাগান থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকার ওপর লেবু বিক্রি করতে পারব।
চরশংকর গ্রামের কৃষক মোস্তফা বলেন, বাড়ির পাশে ১০ শতক পতিত জমিতে লেবুর বাগান করে এখন আমি লাভবান। মহামারি শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছি। কেঁচো সার দিলে গাছ বেশি বাড়ে ও বড় হয়।
কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, বাগান পরিচর্যায় স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগিতা করায় শ্রমিক ব্যয় কম হয়। লেবু বাগানের আয় দিয়েই তাদের সংসারের সব খরচ চলে। রোপণের বছর বাদে প্রতি বছর একবার ডালপালা ছাঁটা, মাটি কোপানো, প্রতি তিন মাসে একবার নিড়ানি ও দুই থেকে তিন মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার দিতে হয়। ফলে একর প্রতি বার্ষিক খরচ হয় মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর এক একর জমির লেবু বাগান থেকে আয় হয় কমপক্ষে তিন থেকে চার লাখ টাকা। তাছাড়া নিজের উৎপাদিত কলম চারা দিয়ে নতুন বাগান তৈরি করা ছাড়াও প্রতিটি কলম করা চারা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করা যায়।
বিলরাউল গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান বলেন, আমি ধান বা সবজি চাষ করতাম। গরু-ছাগল নষ্ট করত। পরে উপসহকারী কৃষি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ক্ষেত দেখে লেবু চাষ করতে বলেন। তার কথামতো লেবু চাষ করছি। এখন বাগান খুব ভালো হয়েছে। এর বাগান করা খুব সহজ। আশা করি লাভবান হবো।
একই গ্রামের রমজান আলী বলেন, লেবু চাষে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। একবার গাছ লাগালে ২০ থেকে ৩০ বছর লেবু হয়। লেবুতে সার-বিষ কম লাগে, বছরে দুইবার সার দিই, ডাল বেশি হলে কেটে দেই। পোকা-মাকর হলে উপসহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শে ওষুধ দিই।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে লাভজনক ফসলের মধ্যে লেবু অন্যতম। কলমের চারা রোপণ করার দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে এবং সারা বছর ফল দেয়। হালকা দোআঁশ ও নিকাশ সম্পন্ন মধ্যম অম্লীয় মাটিতে লেবু ভালো হয়। কৃষকের অধিক আয়, লেবুর পুষ্টিগুণ ও বাজার চাহিদা পূরণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে আমার ব্লকে প্রায় তিন একর জমিতে ১৩টি লেবু বাগান রয়েছে। পাশাপাশি আরও লেবু বাগান সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার শেয়ার বিজকে জানান, চলতি বছর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে। উপজেলার মাইজবাগ, আঠারোবাড়ি ও উচাখিলা ইউনিয়নে লেবুর চাষ বেশি হয়েছে। লেবু বাগানের মালিকদের সার্বক্ষণিক সঠিক পরার্মশ দিয়ে আসছি। লেবুচাষ লাভজনক হওয়ায় এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসংখ্য বাগান গড়ে উঠেছে। অধিক লাভজনক এ লেবু বাড়ির উঠানসহ পতিত জমিতে চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।