লেয়াকতের বাড়ি থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

প্রতিনিধি,বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত-সমালোচিত বিএনপি নেতা ও বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের বহিঃস্কৃত চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউপির ১নম্বর ওয়ার্ড খামারু পাড়া এলাকার তাঁর নিজ বসতঘরে ব্যাপক তল্লাশী চালায় গোয়েন্দা পুলিশ ও বাঁশখালী থানা পুলিশ। এ সময় অভিযানে ২টি বিদেশী পিস্তল, ৫টি দেশীয় তৈরি এলজি, ২টি কাটা বন্দুক, ১টি দেশীয় বন্দুক, বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের ৭২ রাউন্ড গুলি, ২৬টি কাতুর্জ, ৫টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি কিরিচ, ৬টি কাঠেরবাটযুক্ত ধারালো রাম দা এবং ৪০টি বিভিন্ন সাইজের গইট্টা (লাঠি) উদ্ধার করা হয়।

এ সময় অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) সুদীপ্ত সরকার পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার সোহানুর রহমান সোহাগ, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তোফায়েল আহমেদ। এ সময় ডিবি ও থানা পুলিশের শতাধিক সদস্য অভিযানে অংশ নেন।

এ ব্যাপারে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাঁশখালী থানার হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার বিষয়ে প্রেস-বিফ্রিং করেন সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) সোহানুর রহমান সোহাগ, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমেদ।

এ সময় বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘লেয়াকত আলীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল। সে বিভিন্ন সময় এলাকায় বসে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এদিকে তাঁর ঢাকা অবস্থান করার গোপন সংবাদ পেয়ে আমরা বিষয়টি ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করি। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।’

ওসি আরও বলেন, ‘লেয়াকত আলী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের ভিডিও প্রচার করে নিয়মিত রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে গাড়ি ভাংচুরসহ নানা অপরাধে বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানায় বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর সে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। এদিকে তাকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার রাতে আমরা তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করি। এ ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

এ সময় সহকারী পুলিশ সুপার সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘লেয়াকত তাঁর এলাকায় একজন ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ নামে পরিচিত। সে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারে বেশ কয়েক বার অভিযান করা হলেও সে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। তবে বুধবার সন্ধায় রাজধানীর মতিঝিল থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এক পর্যায়ে সে তাঁর কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদ রয়েছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২টি বিদেশী পিস্তল, ৫টি দেশীয় তৈরি এলজি, ২টি কাটা বন্দুক, ১টি দেশীয় বন্দুক, বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের ৭২ রাউন্ড গুলি, ২৬টি কাতুর্জ, ৫টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি কিরিচ, ৬টি কাঠেরবাটযুক্ত ধারালো রাম দা এবং ৪০টি বিভিন্ন সাইজের গইট্টা (লাঠি) উদ্ধার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ’বাঁশখালী থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় খুন, চাঁদাবাজী, পুলিশের উপর হামলা, দস্যুতা, ভয়ভীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধে ২১টিরও বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া কালকের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, পুলিশ আক্রান্ত, বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপরদিকে বিকেলে কোর্টের মাধ্যমে তাঁকে জেলা হাজতে প্রেরণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানাসহ বিভিন্ন থানায় খুন, চাঁদাবাজী, পুলিশের উপর হামলা, দস্যুতা, ভয়ভীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭২ সালের অনুচ্ছেদ- ৭৩(২খ) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ধারাসহ নানা অপরাধে ২১টির বেশি মামলা বিচারাধীন ও তদন্তাধীন রয়েছে।

উল্লেখ্য: গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারী এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে (কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র) ড্রেজিং করার জন্য নিয়োজিত একটি ঠিকাদারের কোম্পানির সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে লেয়াকত আলীর অনুসারীরা। এক পর্যায়ে লেয়াকতের অনুসারীরা পুলিশের ওপরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় চার পুলিশ সদস্য আহত হন। পরবর্তীতে এসব ঘটনায় লেয়াকত ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশ মামলা করে।

এ মামলায় ৯ ফেব্রুয়ারী ভোর বেলায় চট্টগ্রামের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে তাকে প্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অপরদিকে ২০১৬ সালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের শুরু থেকে কয়লা বিদ্যুৎ বিরোধী আন্দোলন করে আসছিলেন লেয়াকত আলী। পরবর্তী এ বিষয়ে একে একে সংঘর্ষে প্রাণ হারান ১৬ জন মানুষ। এরপর থেকে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী। এদিকে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে গণ্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০