Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:07 am

লোকবল সংকটে দুর্বল হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি: ডেপুটি গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকবল সংকটে তফসিলি ব্যাংকের শাখাগুলোর ওপর নজরদারি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, সারা দেশে ব্যাংকগুলোর মোট শাখার বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সুপারভিশনের জন্য লোকবল কম। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুপারভিশনের জন্য লোকবল মাত্র ৭৫০ থেকে ৮০০ জন। কিন্তু সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার। তাই লোকবলের অভাবে সব ধরনের সুপারভিশনে কিছু কিছু দুর্বলতা রয়েছে। লোকবল সংকট দূর না হওয়ায় এ দুর্বলতা আরও বাড়ছে।

‘ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিপালন’ শীর্ষক ওই কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. শামসুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম প্রসাদ দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে মূল গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মহীউদ্দিন ছিদ্দিকী।

কর্মশালায় আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতের বেশ কিছু জায়গায় সুশাসন না থাকায় অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন খুবই প্রয়োজন। এ খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অনেক সময় দেখেছি ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। ফলে কিছু কিছু অনিয়মের অভিযোগও উঠছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন থাকবে না। আইসিসিডি ব্যাংকিং খাতের তৃতীয় নয়ন হিসেবে কাজ করে। তাই আইসিসিডি ডিভিশনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

আইসিসিডি ডিভিশনের দুর্বলতার কারণে অনিয়ম হচ্ছে উল্লেখ করে ডেপুটি গভর্নর বলেন, সুশাসনের অভাবে ব্যাংকের শাখা থেকে ডিপোজিটরদের দুই হাজার কোটি টাকা প্রধান শাখায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় ব্যাংকের বোর্ডের বাইরের লোকজন এসে বোর্ড মিটিং করছে। এগুলো ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো খবর নয়। এভাবে চলতে থাকলে ডিপোজিটরদের স্বার্থরক্ষা সম্ভব হবে না।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ম্যানেজমেন্টকে তার নিজ জায়গা থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাছাড়া অডিট ও আইসিসিডি ডিভিশনকেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে বিআইবিএম অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালনের ওপর কর্মশালা করে আসছে। ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিতে ব্যাংকারদের আগ্রহ বাড়ছে। ব্যাংক ব্যবসার পরিধি যেমন বাড়ছে, এর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালনের গুরুত্বও বাড়ছে। সে অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে দক্ষ লোকবলেরও প্রয়োজন হচ্ছে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের আইসিসিডি এখনও ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’। এমন অবস্থার পরিবর্তন না হলে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকারদের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটি করতে না পারলে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম রোধ করা কঠিন।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, যেসব ব্যাংকে অডিট বিভাগে জনবল কম, সেখানে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। শতভাগ সুশাসন বজায় রাখতে অডিট বিভাগকে শক্তিশালী ও স্বাধীনতা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ব্যাংক গ্রাহকদের দিক বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাবতীয় পদক্ষেপ নেয়। সর্বশেষ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালনও ঠিক এ দিক বিবেচনা করে করা হয়েছে। নিরীক্ষা বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এ নীতিমালায়। নীতিমালা তৈরির পর গত সেপ্টেম্বর ও মার্চ মাসে কিছু সংযোজন করা হয়েছে। এখন আরও আলোচনার মধ্যমে যদি কোনো বিষয় সংযোজন প্রয়োজন হয়, তার সুযোগ আছে।

বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়ার আইসিসিডি বিভাগের প্রধান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আইসিসিডি আইনে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা দূর করলে ব্যাংকিং খাতে আরও সুশাসন জোরদার হবে।