নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানির নিজস্ব আর্থিক বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই ২০১৬-মার্চ ২০১৭) শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৭০ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময় ছিল ৭৬ পয়সা।
জানা গেছে, কোম্পানিটির যন্ত্রপাতি পুরোনো হওয়ায় কাক্সিক্ষত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে বিদেশি বাটনে (বোতাম) দেশি বাজার সয়লাব ও বিদেশি বাটনের দাম কম হওয়ায় ক্রমেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটি।
ইমাম বাটনের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানিতে উৎপাদিত পার্ল, চকক, হর্ন বাটন তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহƒত হয়। বর্তমানে বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গার্মেন্টশিল্পে ব্যবহƒত সব পণ্যের দাম কমে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাটনের চাহিদা এবং বিক্রিমূল্যও কমে যায়। এছাড়াও আমাদের বাটন উৎপাদনের মেশিন পুরোনো হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে এবং যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি হচ্ছে।’
বাটন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইমাম বাটনের সুনাম থাকায় মুনাফা না হলেও লোকসান অনেকটা কমেছে বলে দাবি করেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটি সম্পর্কে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মতামত হচ্ছেÑইমাম বাটন পর্যাপ্ত উৎপাদন ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। এতে কোম্পানিটির লোকসান দিন দিন বাড়ছে। আর এমন অবস্থা চলতে থাকলে কোম্পানিটির ভবিষ্যতে টিকে থাকা অসম্ভব বলে মনে করছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।
কোম্পানির ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন পর্যালোচনার ভিত্তিতে এমন তথ্য জানায় নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। এদিকে নতুন ক্রেতা খুঁজতেও ব্যর্থ হচ্ছে কোম্পানিটি। এর ফলে কোম্পানির রিটেইন্ড লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ১৭ টাকা।
বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা কোম্পানিটির নেই বলে জানিয়েছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যদি অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নতি ও আর্থিক সমস্যার সমাধান না করতে পারে, তাহলে ইমাম বাটনের ভবিষ্যতে টিকে থাকা কঠিন হবে বলে পূর্বাভাস দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
ইমাম বাটনের সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানির নামে মাইডাস ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ২০ শতাংশ সুদহারে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি এ ঋণের তিনটি কিস্তি এখনও বকেয়া রয়েছে। এদিকে আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ইমাম বাটন। ২০ শতাংশ সুদহারে এ ঋণের ২৭টি কিস্তি বকেয়া রয়েছে।
এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই ’১৬-মার্চ ’১৭) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির লোকসান সামান্য কমেছে। গতকাল রোববার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোম্পানিটি। এ সময় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে দশমিক ৭০ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় ছিল দশমিক ৭৬ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান কমেছে দশমিক ছয় টাকা।
এছাড়া তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) হয়েছে দশমিক ১৩ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় যার পরিমাণ ছিল দশমিক ১৭ টাকা (মাইনাস)। আর ৩১ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) হয়েছে সাত দশমিক ৬০ টাকা। ৩০ জুন, ২০১৬ অর্থবছর পর্যন্ত কোম্পানির এনএভিপিএস ছিল আট দশমিক ৩০ টাকা।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি ’১৭-মার্চ ’১৭) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে দশমিক ১৫ টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল দশমিক সাত টাকা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত কোম্পানিটির কারখানা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙা মেশিন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কোম্পানিটি পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছে না। দেড় শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত কারখানায় কাজ করলেও কোম্পানিটি মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৭৫ শতাংশই কাজে লাগাতে পারছে না। ১৩টি লাইনের অধিকাংশ মেশিনই পুরোনো। এছাড়াও বাটনের কাঁচামাল রেজিন, স্টাইরিন মনোমার, প্যারাফিন ওয়াক্স, পার্ল এসন্স ও আরমোজেলসহ সব কাঁচামালের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে বাটনের দাম।
লোকসানে থাকা ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ২০১১ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। কোম্পানির ৩০ জুন ২০১৫ সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় এক টাকা ৬৪ পয়সা। শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়ায় ৯ টাকা ৩১ পয়সা। এর পরের অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় এক টাকায়।
এদিকে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-ডিসেম্বর ’১৬) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইমাম বাটনের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৫ পয়সা। গত বছরের একই সময় যা ছিল ৬৯ পয়সা লোকসানে। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য হয়েছে সাত টাকা ৭৫ পয়সা। শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ’১৬) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩১ পয়সা। গত বছরের একই সময় যা ছিল ৩৩ পয়সা লোকসানে।
দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা এ কোম্পানিটির শেয়ারদর প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বিদায়ী বছরের শেষদিকে ইমাম বাটনের অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ হয়নি।
Add Comment