Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 11:21 pm

ফের উল্লম্ফন ইমাম বাটনের শেয়ারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লোকসানি ইমাম বাটনের শেয়ারদরে। লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদরের এ ঊর্ধ্বগতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। তথ্যমতে, লোকসানি ইমাম বাটনের শেয়ারদর গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। গত ৪ অক্টোবর কোম্পানির শেয়ার ১৮ টাকা ৯০ পয়সা বেচাকেনা হয়। গতকাল কোম্পানির শেয়ার ২৩ টাকা ২০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। এর মধ্যে এক দিন পতন হয়েছিল।

উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে লোকসানের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘ইমাম বাটন’। ফলে প্রায়ই টানা বড় ধরনের পতনে থাকে এ কোম্পানির শেয়ার। মাঝেমধ্যে শেয়ারদরে উত্থান দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে আবার পতনে রূপ নেয়। যে কারণে এ শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত।

বাজার চিত্রে দেখা যায়, গত জুন থেকে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ দরে শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। অর্থাৎ গত জুনের শুরুতে কোম্পানির ১৪ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে দর বেড়ে সর্বোচ্চ ২৬ টাকা ৪০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। চার মাসের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে দ্বিগুণ দরে লেনদেন হয়। পরবর্তী সময়ে কিছুদিন পতন হলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ারদর সর্বনিম্ন আট টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ২৭ টাকা ৫০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।

কোম্পানির শেয়ারদর কী কারণে বাড়ছে, তা জানতে কোম্পানি সচিব মহিউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজিব আহমেদ জানায়, কী কারণে শেয়ারদর বাড়ছে, তা আমাদের জানা নেই।

এদিকে কিছুদিন আগেও কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে নোটিশ দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নোটিশের জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দর বাড়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কোম্পানির কাছে নেই।

সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ ১৫ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে লোকসানের পরিমাণ ছিল মাত্র সাত পয়সা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি লোকসান বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। দিন দিন লোকসানের মাত্রা বাড়ছেই। শুধু লোকসানই নয়, কোম্পানিটির পুঞ্জীভ‚ত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৩১ লাখ টাকা।

ডিএসইতে দেওয়া লভ্যাংশের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সাত বছর ধরে কোম্পানিটির কোনো লভ্যাংশের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের গতির সঙ্গে কিছু কোম্পানির শেয়ারদরে উল্লম্ফন দেখা যায়। এসব কোম্পানির মূলধন কম। সেই সঙ্গে শেয়ারসংখ্যাও কম। স্বল মূলধন এবং শেয়ারসংখ্যা কম থাকার কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার নড়াচড়া করতে পারে কোনো চক্র। তারা শেয়ার লেনদেন করে দর বাড়িয়ে সুযোগ বুঝে মুনাফা হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব শেয়ারে বিনিয়োগের আগে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তারা।

তারা বলেন, একজন বিনিয়োগকারী যদি বুঝেশুনে লোকসানি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে, তাহলে তো লোকসানের বোঝা মাথায় নিতে হবে। তাই এসব কোম্পানির শেয়ারে লোভে পড়ে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দেন তারা।

পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ৭৭ লাখ। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।