Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:01 pm

লোকসানের শঙ্কায় ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে টানা বেশ কয়েক দিনের তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া কুয়াশা পড়ায় বীজতলায় ঠা-া পানি জমছে। এই পানির কারণে চারা তুলনামূলকভাবে বড় হচ্ছে না। মৌসুমের শুরুতেই এমন হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ বছর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বীজতলা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করছেন তারা। ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কয়েক দিন থেকে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা আট থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এ অবস্থায় জেলার কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে কৃষকদের শুকনো, ভেজা ও ভাসমান তিন ধরনের বীজতলার বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বীজতলা তৈরিতে স্থান, জমি তৈরি, শেড তৈরি, সার প্রয়োগ, বীজ বপন, বীজ জাগ দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে কৃষকদের। এছাড়া শুকনো বীজ একটানা কত ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং কোন জাতীয় স্থানে রাখতে হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য তাদের প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ভালো চারা উৎপাদনের জন্য বীজের ভ্রুণ জাগরিত করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা নিয়মিতভাবে প্রদান করা হয়।

সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের লস্করা গ্রামের কৃষক হরেন জানান, প্রত্যেক বছর কমপক্ষে আড়াই বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগান। চলতি বছরও বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু তীব্র শীতে চারা মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে শীতের প্রকোপে চারাগুলো বড় হচ্ছে না বলে জানান তিনি। শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেলে চারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাসেল ইসলাম জানান, চলতি বছর ঠাকুরগাঁওয়ে বোরো বীজতলার জন্য দুই হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৯ হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৭৩ মেট্রিক টন। গত বছরে ছিল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, কৃষি বিভাগ থেকে এরই মধ্যে কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শীতের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে বোরো বীজতলার

তেমন একটা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তিনি জেলার কৃষকদের প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেয়ার প্রশংসা করে জানান, বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের মতো বোরো ধানেরও বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।