পলাশ শরিফ: পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। একই সঙ্গে বাড়ছে ব্যবস্থাপনা ব্যয়। অন্যদিকে বিদেশি কাগজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর কারণে দেশি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। সৃষ্ট প্রতিকূল ব্যবসায়িক পরিস্থিতিতে লোকসানে ডুবছে কাগজ ও প্রকাশনা খাতের ‘কোম্পানি হাক্কানী পেপার অ্যান্ড পাল্প’। গত পাঁচ বছরে প্রায় ছয় কোটি ১৯ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে চট্টগ্রামভিত্তিক হাক্কানী গ্রুপের কোম্পানিটি। ঘুরে দাঁড়াতে কারখানার আধুনিকায়নসহ বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলছে কোম্পানিটি। কিন্তু কবে নাগাদ এর সুফল মিলবেÑবিনিয়োগকারীদের এ প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কাগজ ও প্রকাশনা খাতের স্বল্প মূলধনি কোম্পানি হাক্কানী পাল্প। সরকারিভাবে আমদানি শুল্ক কমানোর জেরে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি বৃদ্ধি, কারখানার পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে বাড়তি উৎপাদন খরচ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে কোম্পানিটি। এক দশকে উত্থান-পতনের মধ্যে থাকা কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনছে। সর্বশেষ সমাপ্ত (২০১৬-১৭) আর্থিক বছরেও প্রায় এক কোটি ৮১ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি। উৎপাদন খরচ কমানো ও নতুন পণ্য উৎপাদনের জন্য কারখানার আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দিয়েছে হাক্কানী পাল্প। কিন্তু এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
আলাপকালে হাক্কানী পাল্পের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মূসা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কারখানার পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন ব্যয় কমানো যায়নি। অন্যদিকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকে থাকতে ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়-বিপণন ব্যয় বেড়ে গেছে। এসব কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছি। কোম্পানিটিকে মুনাফায় ফিরিয়ে আনতে কারখানার আধুনিকায়ন (বিএমআরই) কাজ চলছে। এটি শেষ হলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে। সেই সঙ্গে নতুন পণ্যও উৎপাদন করতে পারব। তবে কবে নাগাদ আধুনিকায়ন কাজ শেষ হবেÑতা এখনই বলা যাচ্ছে না। আরও সময় লাগবে।’
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছর থেকে ২০১৬-১৭ আর্থিক বছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে হাক্কানী পাল্পের আয় প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়লেও বাড়তি উৎপাদন খরচ ও ব্যবস্থাপনা-বিক্রয়-বিপণন ব্যয়ের কারণে কোম্পানিটির মুনাফা বাড়েনি। বরং লাভজনক থেকে লোকসানে জড়িয়েছে কোম্পানিটি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান প্রায় ৩৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে প্রায় ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লোকসানে থাকা কোম্পানিটি সর্বশেষ সমাপ্ত আর্থিক বছরে প্রায় এক কোটি ৫৮ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে।
এদিকে সর্বশেষ ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে প্রায় ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা আয় করেছে হাক্কানী পাল্প। এর মধ্যে উৎপাদন খরচ বাবদ হিসেবে প্রায় ৩১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর জের ধরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় মেটানোর পর কোম্পানিটির লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর কর-পরবর্তী লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে এ লোকসানের পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা ছিল। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কর-পরবর্তী লোকসান প্রায় পাঁচ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে প্রায় ১৯ কোটি টাকা মূলধনি কোম্পানিটির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দায়ের পরিমাণ প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা কোম্পানিটির রিজার্ভের চেয়েও প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা বেশি।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে সর্বশেষ পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। লোকসানের কারণে সর্বশেষ সমাপ্ত আর্থিক বছরে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে হাক্কানী পাল্প। কোম্পানিটির মোট এক কোটি ৯০ লাখ শেয়ারের মধ্যে প্রায় ৫৫ দশমিক ৫২ শতাংশই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে শেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আট দশমিক ৩২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তবে লোকসানে ডুবলেও পুঁজিবাজারে ‘নানা গুঞ্জনের কারণে দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই’ হাক্কানী পাল্পের শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।