নিজস্ব প্রতিবেদক: হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপারের শেয়ারদর কয়েক দিন ধরে লাফিয়ে বাড়ছে। অথচ কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এমনটিই জানা গেছে। লোকসানি কোম্পানির টানা দর বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তথ্যমতে, গতকাল হাক্কানী পাল্পের শেয়ার সর্বশেষ ৬০ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়। যা আগের দিনের চেয়ে দুই দশমিক এক শতাংশ বেড়েছে। এর আগে ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার ৫৩ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। এরপর থেকে তাদের শেয়ারদর টানা বেড়েছে। এক বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ ৪৬ টাকা ২০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ৯৭ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
সর্বশেষ প্রকাশিত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩১ পয়সা, আগের বছর একই সময় লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৮ পয়সা। অর্থাৎ আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯ পয়সা, আগের বছর একই সময় ইপিএস হয়েছিল ১৮ পয়সা।
দর বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মুসা শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার মতো কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। তবুও কি কারণে বাড়ছে, তা আমাদের জানা নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ মন্দার পর বাজার কয়েক দিন ধরে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আর এ বাজারে কিছু লোকসানি ও স্বল্পমূলধনি কোম্পানির শেয়ারদরে উল্লম্ফন লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব কোম্পানির দর বাড়ার পেছনে কোনো চক্র জড়িত কি না, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত বলে তারা মনে করেন।
রয়েল সিকিউরিটিজ হাউজে ট্রেড করেন রনি সাহা। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে ভালো কোম্পানির চেয়ে দুর্বল শেয়ারদরে বেশ উল্লম্ফন দেখা যায়। এসব শেয়ার অতিমূল্যায়িত হলে অতীতের মতো বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এসব শেয়ারদর কি কারণে বাড়ছে, এর পেছনে কেউ জড়িত কি না তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খতিয়ে দেখার দাবি জানাই।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রায় তিন মাস বাজারে মন্দা অবস্থা ছিল। তখন বেশ কিছু শেয়ারদর অনেক নিচে নেমে গেছে। বর্তমান বাজারে সেগুলো খুবই ধীরে ধীরে বাড়ছে। তারচেয়ে স্বল্পমূলধনি ও লোকসানি কোম্পানির দরে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এতে বাজার কতদিন গতিশীল থাকবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার ২০১৩ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালের সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে কোম্পানির স্থান হয় ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে।
পুঁজিবাজারে ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত হাক্কানী পাল্পের অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৯ কোটি টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা এক কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৫৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে আট দশমিক ৩২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার আছে।