লোকসানে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়ার পোলট্রি খামার

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পোলট্রি শিল্প। লোডশেডিং ও দফায় দফায় খাবারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পোলট্রি শিল্পে মারাত্মক ধস নেমেছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পোলট্রি খামার। আবার যেসব খামার এখনও টিকে আছে তারাও নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। এরই মধ্যে পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসায়ী ধারাবাহিক লোকসানের কারণে পুঁজি খুইয়ে পথে বসেছেন।

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সঙ্গে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতিদিন অনেক মুরগি মারা যাচ্ছে। খামারিরা বলছেন, লোডশেডিং ও খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে এক সময়ের লাভজনক এই পোলট্রি শিল্প।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় তিন হাজারের মতো পোলট্রি খামার রয়েছে। করোনা মহামারি পোলট্রি শিল্পে বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই দফায় দফায় খাবারের দাম বাড়তে থাকে। সম্প্রতি দেশব্যাপী চলা লোডশেডিংয়ের কারণে মারা যাচ্ছে মুরগি। এতে করে বাধ্য হয়ে খামার বন্ধ  করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

সদর উপজেলার আইলচারা গ্রামের পোলট্রি খামারি শাকিল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারি শুরুর আগে ৫০ কেজির এক বস্তা পোলট্রি ফিডের দাম ছিল ১৮০০ টাকা। সেই খাবারের দাম দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৩৩০০ টাকা বস্তা গিয়ে ঠেকেছে। একইভাবে মুরগির যাতে রোগ-বালাই না হয় সেজন্য যে ওষুধ খাওয়ানো প্রয়োজন হয় সেসব ওষুধের দামও কয়েকগুণ বেড়েছে। খাবার এবং ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়লেও মুরগির দাম সে তুলনায় বাড়েনি। আবার দাম কিছুটা বাড়লেও তার সুফল প্রান্তিক খামারিরা পাচ্ছে না। সুফল চলে যাচ্ছে বাজারে যারা মুরগি বিক্রি করছেন সেসব ব্যবসায়ীর হাতে।

তিনি আরও বলেন, একটি মুরগি বিক্রির উপযোগী করে তুলতে অন্তত ৪০ দিন সময় লাগে। এই সময় পর্যন্ত মুরগিকে খাইয়ে-দাইয়ে সন্তানের মতো লালনপালন করে বিক্রি করার সময় লাভ তো দূরের কথা আসল খরচই উঠছে না। ফলে অব্যাহত লোকসানের কারণে আমার মতো অনেকেই খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

মিরপুর উপজেলার পোলট্রি ব্যবসায়ী মোরশেদ আলী বলেন, পোলট্রি খাদ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে পুষিয়ে উঠতে না পেরে মুরগি কমিয়ে ফেলছেন খামারিরা। কেউবা পুঁজি হারানোর ভয়ে একেবারেই গুটিয়ে নিয়েছেন খামার।

কুমারখালী উপজেলার এলেঙ্গীপাড়া এলাকার খামারি জসিম উদ্দিন বলেন, খাবার-ওষুধের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির যন্ত্রণার সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনা। অধিকাংশ খামার গড়ে উঠেছে গ্রাম-গঞ্জে। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এসব এলাকায় অনেক সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকে না। এই চিত্র নিত্যদিনের। তাই অত্যধিক গরমে প্রতিদিনই মুরগি মারা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন মুরগি লালনপালন করতে হলে সহায়-সম্বল সব বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করা লাগবে। সেজন্য আমার মতো জেলার শত শত খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

কুষ্টিয়া জেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম দাবি করেন, দফায় দফায় খাবার ও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে জেলার পোলট্রি শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তার দাবি, এরই মধ্যে জেলার প্রায় ৭০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। যারা চালু রেখেছেন তারাও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছেন।

করোনার সময় সরকারি সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলার প্রায় তিন হাজার খামারির মধ্যে সে সময় হাতেগোনা মাত্র কিছু খামারি সহায়তা পেয়েছেন, যা ছিল খুবই অপ্রতুল। তিনি জানান, একেকজন খামারি সরকারি সহায়তা পেয়েছেন মাত্র ২০ হাজার টাকা। অথচ তারই লোকসান হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। বর্তমানে খামারিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যেসব ব্যবসায়ী

তাদের কাছ থেকে কম দামে মুরগি কিনে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন তারাই লাভবান হচ্ছেন।

জেলার পোলট্রি শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, খাবারের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনাসহ সমস্যা চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেন জেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের এই নেতা। কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দীকুর রহমান জেলার পোলট্রি খামারিদের দুর্দশার কথা স্বীকার করে বলেন, নানামুখী সংকটের কারণে এরই মধ্যেই জেলার প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০