লোকসানে রাজবাড়ীর পানচাষিরা

খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী: কভিডের প্রভাবে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ থাকা ও স্থানীয় বাজারে পানের দাম কমে যাওয়ায় পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পানচাষিরা। রাজবাড়ী জেলার উৎপাদিত পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্তত আটটি দেশে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু কভিড মহামারির ফলে বর্তমানে বিদেশে পান রপ্তানি এখন বন্ধ প্রায়। এছাড়া শীতের মৌসুমেও স্থানীয় বাজারে পান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ না ওঠায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পান চাষ।

পান চাষের অনুকূল পরিবেশ, বিদেশে মিষ্টি পানের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পানচাষিদের ভাগ্যের চাকা ঘুরছিল। কিন্তু গত ২ বছর কভিডের কারণে চাহিদা কম আর রপ্তানি না হওয়ায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে পান। বর্তমানে দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে জানিয়েছেন পানচাষিরা।

জানা গেছে, জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর, বহরপুর ও বালিয়াকান্দিÑ এ তিনটি ইউনিয়নের ইলিশ খোল, জামালপুর, নলিয়া, আরকান্দি, বালিয়াকান্দি ও বেতেঙ্গাসহ ২৬টি গ্রামের ছয় শতাধিক কৃষক পরিবার একমাত্র পান চাষের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মহামারির কারণে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ ও বাজারদর অপেক্ষা উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রামের ছয় শতাধিক পানচাষির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মিষ্টি পান চাষে উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত বালিয়াকান্দি। এ উপজেলায় দুই জাতের পান চাষ হয়ে থাকে। একটি হলো মিষ্টি পান ও আরেকটি হলো সাচি পান। উপজেলাতে ৮৮ হেক্টর জমিতে মোট ৮১৪টি বরজে মিষ্টি পান ও সাচি পানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মিষ্টি পানের বরজ ৬৫৮টি এবং সাচি পানের বরজ ১৫৬টি।

পানচাষি শ্যামল সরকার বলেন, কভিডের আগে পান চাষ করে ভালোই লাভ হতো। কিন্তু মহামারি আসার পর থেকেই পানে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ আছে। এছাড়া এখন দেশীয় বাজারে পানের দাম কম। এ মৌসুমে লাভের আশা করছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়ায়েদর প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে পানের বরজে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক বরজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে পান চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকতে হবে।

পানচাষি রনজিৎ সাহা বলেন, বাঁশ, খড়, পাটখড়ি ও বরজ তৈরির উপকরণের দাম এখন আগের চেয়ে ৪-৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক বিঘা জমিতে ৩৫-৪০ মণ খৈল ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া আছে কীটনাশক ওষুধ ও শ্রমিক খরচ। সব মিলে প্রতি বিঘা জমিতে পানচাষে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। বিক্রি করে দেখা যায়, ন্যায্য মূল্য না পাওয়াতে উৎপাদনের খরচ পেতে হিমশিম খেতে হয়।

বাবাকে পানের বরজে সাহায্য করতে আসা কলেজছাত্র অমিত সাহা বলেন, এ অঞ্চলের সাচি ও মিষ্টি পানের সুখ্যাতি বহুদিনের। মিষ্টি পান রাজবাড়ী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার চাহিদা মিটিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া রপ্তানি করা হতো। করোনার কারণে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়েছে। বাজারে পানের দাম নেই। এ কারণে আমরা পান চাষ বাদ দিয়ে অন্য কিছু চাষে ঝুঁকছি।

আরেক পানচাষি আজাদ শেখ জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে প্রতি বছর এ খাত থেকে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। অনেক সময় বেশি সুদে ঋণের কিস্তি পরিশোধে পানচাষিদের বেকায়দায় পড়তে হয়। এছাড়া পানের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তারা কোনো পরামর্শ দিতে পারে না। ফলে পানচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি বিভাগ থেকে সঠিক পরামর্শ ও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া না গেলে সামনে পানচাষিরা পান চাষ থেকে সরে আসবে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের পানের সুখ্যাতি বহুদিনের। স্থানীয় বাজরে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু করোনার কারণে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিদেশে যাতে পুনরায় পান রপ্তানি করা যায় সে চেষ্টা করছি। এছাড়া আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পানচাষীদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০