লোকসান কমাতে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক?

 

সংগীত কুমার : নানা নাটকীয়তার পর আগামী ৪ মে থেকে ট্রেনের ভাড়ার ক্ষেত্রে রেয়াতি (ছাড়) ব্যবস্থা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে কোনো যাত্রী ১০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে ভ্রমণ করলে, তার ভাড়ার ক্ষেত্রে যে রেয়াত বা ছাড় পেয়ে আসছিল, তা আর পাবে না। যদিও এপ্রিলের পহেলা তারিখ থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর করার কথা ছিল, কিন্তু জনগণের অসন্তোষের মুখে পিছু হটে রেলওয়ে। এই নতুন ব্যবস্থায় দূরের গন্তব্যে ট্রেনের ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে ট্রেনের ভাড়া কী হারে বাড়ছে এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করেনি রেল কর্তৃপক্ষ। লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত বলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু আদৌ একমাত্র ভাড়া বৃদ্ধিই কি ট্রেনের লোকসান কমাতে পারবে?

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন গতির মধ্যে কিছুদিন আগেই বাড়ানো হয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। এবার ট্রেনের যাত্রীরা ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্ব ও সেকশনভিত্তিক যে রেয়াতি ভোগ করে আসছিল, সেটাও হারাচ্ছে। ফলে, কোনো যাত্রী ১০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করলে তাকে গুনতে হবে অতিরিক্ত ভাড়া। ১০১ থেকে ১৫০ ভ্রমণে একজন যাত্রীর ২০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি পাবে, ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটারে ২৫ শতাংশ এবং ৪০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণে ৩০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। যেমন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার। এই পথে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা, বিরতিহীন সোনার বাংলা ট্রেনে এ শ্রেণির ভাড়া ৪০৫ টাকা, রেয়াত ও সুবিধাহীন এবং বিরতিহীন পর্যটক এক্সপ্রেসের ভাড়া ৪০৫ টাকা। এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শোভন শ্রেণির ভাড়া ৬০ টাকা, এসি সিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ১২০ টাকা এবং এসি (বার্থ) কামরার ভাড়া বাড়বে ২১৬ টাকার মতো।  যাত্রীবাহী এই ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে রেলের লোকসান কমানো এবং বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, রেল খাতে তো সাধারণ জনগণের করের হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলো। ২০১২ সালের অক্টোবরে সেকশনভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহার করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। পরে ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে আরেক দফায় রেলের ভাড়া বাড়ানো হয় ৭ থেকে ৯ শতাংশ। তারপরেও রেলের লোকসান কমানো যাচ্ছে না কেন?

বর্তমান ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়লেও রেলের আয় বাড়বে মাত্র ৩০০ কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ মাত্র ৩০০ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আয়ের জন্য সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধি চাপ তৈরি করতে হচ্ছে? সরকারের রাজস্ব আয়ের এই হাল কার দোষে?

দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়, বিশেষ করে উঠতি ধনীদের কাছ থেকে সরকারের প্রত্যক্ষ আয় কর আহরণ সেই তুলনায় বাড়েনি। তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ধনী ও উচ্চবিত্ত মানুষদের ৮৭ শতাংশ কোনো ধরনের আয় কর দেন না। জিডিপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজস্ব আয় না বাড়লেও ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া বন্ধ করেনি সরকার। দেশি, বিদেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে একের পর এক অবকাঠামোগত প্রকল্প করা হচ্ছে। পরিকল্পনায় ত্রুটি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বারবার। ফলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আরও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকার। উদাহরণস্বরূপ, চলতি অর্থ বছরে প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ-আসল বাবদ ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের বিপরীতে ১০৫ কোটি (১১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা) ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে সুদ বাবদ বরাদ্দ করা অর্থের ৯৪ শতাংশ (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ইআরডি)

বর্তমান যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তার সমাধানের জন্য প্রয়োজন ছিল ধনীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ কর আহরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানো এবং দুর্নীতি, অপচয় ও লুণ্ঠন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২২ হাজার কোটি টাকা। গত জুলাই-মার্চ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার শুল্ক আদায় করা হয়েছে। সরকারের উচিত ছিল শতভাগ শুল্ক আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিদেশি ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আরও সংযতপূর্ণ অবস্থান থেকে বিচার বিশ্লেষণ করা। কিন্তু সরকার তা না করে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায় বাড়াতে চাইছে। যা নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। কিছুদিন আগে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর এবার রেলের ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ এরই ধারাবাহিকতা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা আর ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ লোকসান ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে রেলকে গুরুত্ব দেয়। সংস্থার উন্নয়নে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে। পরিচালনা ব্যয় করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে রেল আয় করেছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ১ টাকা আয় করতে রেল ব্যয় করছে ২ টাকা ৭৮ পয়সা। ২০১২ ও ২০১৬ সালে রেলের ভাড়া বাড়ানো হলেও লোকসানের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছে না। কারণ রেলের ভাড়া বৃদ্ধিই একমাত্র ও সঠিক উপায় নয়। এর জন্য যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে ট্রেন প্রতি আয় বাড়াতে হবে ও ব্যয় হ্রাস করতে হবে। ট্রেনে ভাড়া উত্তোলনে স্বচ্ছতা ও টিকিটের কালোবাজারি কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে।

যাত্রী পরিবহনে ভাড়া ছাড়াও আরও যেসব বিষয়ের ওপর ট্রেন প্রতি আয় নির্ভর করে, তার মধ্যে রয়েছে ট্রেন প্রতি যাত্রীবাহী কোচের সংখ্যা, কোচের যাত্রী ধারণক্ষমতা ও কোচের সিটের কত শতাংশ ব্যবহƒত হচ্ছে (অকুপেন্সি রেট), তার হার প্রভৃতি। কোচের সংখ্যা বাড়ালে ট্রেন থেকে আয় বাড়ে কিন্তু খরচ সমানুপাতে বাড়াতে হয় না। কারণ রেলওয়ের অনেক খরচ কোচের সংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, যেমন রেললাইন, ইঞ্জিন, গার্ড, চালক, প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি। ফলে যেসব রুটে ট্রেন জনপ্রিয় এবং কোচগুলো সবসময় যাত্রী বোঝাই হয়ে চলে, সেসব ট্রেন ও ট্রেনের কোচসংখ্যা বাড়ানো হলে আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাংলাদেশে চাহিদা ও জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন রুটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রেন ও ট্রেন প্রতি পর্যাপ্ত সংখ্যক কোচ বা বগি সরবরাহ না করার কারণে রেলের আয় বাড়ছে না।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অধিকাংশ যাত্রী এখন অনলাইনে টিকিট কাটেন। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব পেমেন্ট ব্যবস্থা না থাকায় বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়ের মতো কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ রেলওয়েরই অ্যাপ ব্যবহার করে হাজার কোটি টাকা আয় করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে নিজস্ব পেমেন্ট সেবা চালু করলে এই বিপুল অর্থ অন্য কোম্পানিগুলোর কাছ যেত না।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২-২৩ অনুসারে, ২০০৯ থেকে জুন ২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে অর্জিত সাফল্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৪৩টি নতুন ট্রেন চালু, ৮৭৩ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ, ১৩৯১ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন/পুনর্নির্মাণ, ১৪৬টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ২৩৭টি স্টেশন বিল্ডিং পুনর্বাসন/পুনর্নির্মাণ, ১০৩৭টি নতুন সেতু নির্মাণ, ১০৯টি লোকোমোটিভ সংগ্রহ, ৬৫৮টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ, ৫৩০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন, ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ, ২৭৭টি মালবাহী ওয়াগন পুনর্বাসন ইত্যাদি। এসব কাজে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার কতটুকু মৌলিক কাঠামোগত সমস্যা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠোছে। নতুন রেললাইন ও স্টেশন ভবন নির্মাণের পেছনে অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন, কোচ ও লোকবলের ব্যবস্থা না করেই নতুন নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। যার ফলে নতুন নির্মিত লাইনগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোচ দেয়া হচ্ছে না। নানা অজুহাতে গরিবের ট্রেন বলে পরিচিত অনেক লোকাল ও কমিউটার ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

একটি সমীক্ষা মোতাবেক, রেলের সব কটি ট্রেন নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হলে দরকার ৩ হাজারের বেশি কোচ ও প্রায় ৫০০ ইঞ্জিন। কিন্তু বর্তমানে রেলে কোচ আছে ১ হাজার ৭৮৮টি যার ৪৭ শতাংশেরই অর্থনৈতিক মেয়াদকাল শেষ। অন্যদিকে রেলে বর্তমান সচল ইঞ্জিনের সংখ্যা মাত্র ২৯৫টি যার ৬০ শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। আর মালবাহী ওয়াগনের সংখ্যা ৩ হাজার ২৪৭ যার ৬৭ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ।

এই জীর্ণ-পুরোনো ইঞ্জিন, কোচ ও ওয়াগনগুলোর প্রায়ই সময় নষ্ট থাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী কাজে লাগানো যায় না। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন না থাকার কারণে একটি ইঞ্জিন দিয়েই একাধিক ট্রেন পরিচালনা করা হয়। ফলে পথিমধ্যে ট্রেন ইঞ্জিন বিকল ও শিডিউল বির্পযয় লেগেই থাকে।

শুধু যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে তো আর রেলকে লাভজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন মালামাল পরিবহনে গুরুত্ব প্রদান। মালবাহী ট্রেন যাত্রীবাহী ট্রেনের তুলানায় বেশি লোড গ্রহণ করলেও উভয়েই একই ড্রাইভার, রেললাইন, সিগন্যাল-ব্যবস্থা ইত্যাদি ব্যবহার করে। ফলে মালবাহী ট্রেন যাত্রীবাহী ট্রেনের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি লোড বহন করলেও খরচ যাত্রীবাহী ট্রেনের তুলনায় দ্বিগুণেও কম হয়। রেলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের দৈনিক গড় আয় যেখানে তিল লাখ টাকা, সেখানে একটি মালবাহী ট্রেনের গড় আয় সাত-আট লাখ টাকা। কিন্তু প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও ওয়াগন সংকটের কারণে বাংলাদেশ মালবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে পারছে না। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে রেলমন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুসারে, দেশে ৩৫০টির বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করলেও মালবাহী ট্রেন মাত্র ২০-২৫টি চলাচল করে, বিধায় রেলের আয় কম হচ্ছে।

রেলওয়ের লোকসানের কারণগুলো দূর না করে শুধু ভাড়া দফায় দফায় বাড়িয়ে কোনো লাফ হবে না। এটি চৌবাচ্চায় পানি ভর্তি করার অঙ্কের সঙ্গে তুলনীয় কথা মনে করা যাক। চৌবাচ্চার তলা ফুটো রেখে যতই পানি ঢালা হোক না কেন, চৌবাচ্চা কিন্তু ভরবে না। যা ২০১২ ও ২০১৬ সালের ভাড়া বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা থেকে পরিষ্কার।

যাত্রী ও মালামালে ঠাসাঠাসি হয়ে যেভাবে ট্রেনগুলো চলাচল করে তাতে কখনো লোকসান হওয়ার প্রশ্নই আসে না। রেল লোকসান কমাতে পারছে না। কারণ চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইঞ্জিন ও বগি সরবরাহ করতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। অবাধে তেল চুরি, ভাড়া ঠিকঠাক কোষাগারে জমা না করা, টিকিটের কালোবাজারি, নষ্ট ও পুরোনো ইঞ্জিন ও বগি মেরামত করতে প্রতি বছর বাড়তি খরচ ইত্যাদি বন্ধ না করলে রেলকে লাভজনক করা সম্ভব নয়। রেলের প্রয়োজনীয় ও দক্ষ লোকবলের সংকট লোকসানের অন্যতম কারণ। বর্তমানে রেলস্টেশনের মাস্টার, লোকোমাস্টার (চালক), পোর্টার, লেভেল ক্রসিং গেটম্যান ইত্যাদি জনবল সংকট রয়েছে। মোট ৪৭ হাজার ৬৩৭টি পদের বিপরীতে জনবল রয়েছে মাত্র ২৪ হাজার ৫০০ জন। রেলের দুই অঞ্চলের লোকমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকমাস্টার (এএলএম), ও সাব লোকমাস্টার (এসএমএল) পদের সংখ্যা ২ হাজার ২৩৬। বিপরীতে কর্মরত আছেন ৮৫০ জন, যা ট্রেন চালানোর কাজে নিয়োজিত জনবলের চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৩৮ শতাংশ। এ রকম ইঞ্জিন, কোচ, ওয়াগন ও জনবল সংকটের কারণে ৬২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি করা নতুন তিনটি রেললাইন পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ।

রাষ্ট্রের সেবা খাত হিসেবে এবং দরিদ্র জনগণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ, সস্তা ও পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে রেলওয়েকে লাভজনক হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। জনগণের অর্থ থেকে রেলওয়ে খাতে কিছু টাকা ভর্তুকি দরিদ্র জনগণের সস্তা যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে সড়ক খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভর্তুকির তুলনায় অনেক বেশি কল্যাণকর ভূমিকা পালন করবে।

তাই শুধু ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে নয়, লোকসানের মূল কারণগুলো উদঘাটন এবং সেগুলো সমাধানের পথ বের করার মাধ্যমেই লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হওয়া সম্ভব।

শিক্ষার্থী, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০