লোকসান না কমালে রেলকে নতুন ঋণ দেবে না এডিবি!

ইসমাইল আলী: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বেশকিছু প্রকল্পে বড় অঙ্কের ঋণ চেয়েছে রেলওয়ে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। তবে এ ঋণ পেতে রেলের অপারেশন অনুপাত তথা লোকসান কমানোর শর্ত দিয়েছে এডিবি। এক্ষেত্রে দ্রুত ভিত্তিতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর প্রতি জোড় দেয়া হয়েছে। তা না হলে বিদ্যমান অবস্থায় রেলে নতুন বিনিয়োগ টেকসই হবে না বলে জানায় এডিবি।

সম্প্রতি রেলভবনে এডিবি ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ শর্ত দেয় সংস্থাটি। এডিবির এইড মেমরেও এ শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে জানায়, ২০১৯ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দেয়া হয়েছে। এটি কার্যকরে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে সাতটি প্রকল্পে এডিবির কাছে ঋণ চাওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি প্রকল্পে আগামী তিন বছরের মধ্যে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি পাইপলাইনে থাকা আরও কিছু প্রকল্পে ঋণ চাওয়া হয় বৈঠকে। তবে ঋণ দেয়ার আগে রেলওয়েকে লোকসান কমানো তথা ভাড়া বাড়ানোর শর্ত দেয় সংস্থাটি।

বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেলের অপারেশন রেশিও তথা আয়-ব্যয় অনুপাত ছিল ২৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ ওই বছর ১০০ টাকা আয়ে ২৮৭ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে রেলকে।

এ প্রসঙ্গে এডিবি মন্তব্য করে, সংস্থাটি রেলের অপারেশন রেশিও’র প্রতি জোড় দিচ্ছে। শুধু নিজের জন্য রেলওয়েকে ভাড়া বাড়ালে চলবে না। কারণ রেলের সব উন্নয়ন ব্যয় সরকার বহন করছে। তারপরও অপারেশন রেশিও ২০০ শতাংশের বেশি মানে হলো সংস্থাটির পরিচালনা আর টেকসই অবস্থায় নেই। এ অবস্থায় রেলে নতুন বিনিয়োগের আগে বিষয়টি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। রেলের অপারেশন রেশিও ১৫০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথাও জানানো হয় বৈঠকে।

এর উত্তরে রেলওয়ে জানায়, ২০১৯ সালের মার্চে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। পরে তা যাচাই-বাছাইয়ে উচ্চ পর্যায়ের রিভিউ কমিটি করে মন্ত্রণালয়। সরকার অনুমোদন করলে দ্রুতই তা কার্যকর করা যাবে।

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের গঠিত ওই কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ২০২০ সালে। সেটি কার্যকর হলে রুটভেদে শোভন চেয়ারে ভাড়া বাড়বে ২০-৩০ শতাংশ। এছাড়া প্রথম শ্রেণির (নন-এসি) সিট ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়বে। আর এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ও এসি সিটে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়বে। এছাড়া প্রথম শ্রেণি নন-এসি বার্থে ভাড়া বাড়বে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং এসি বার্থে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। তবে সাধারণ তথা নিন্ম আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় ও এর নিচের কোনো আসনে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। এসব ক্ষেত্রে ন্যূনতম ভাড়ার হার বৃদ্ধি পাবে।

যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনেও ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। আর রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহনে বিদ্যমান ৫০ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। তবে দুই বছর পেরুলেও নতুন ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে এডিবির ঋণে রেলওয়ে রিফর্ম প্রকল্প নেয়া হয়। এর আওতায় কয়েকটি কার্যক্রম বাস্তবায়নের শর্ত ছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি প্রণয়ন ও কার্যকর করা। ২০১৩ সালে এ পলিসি প্রণয়ন করা হয়, যা পরবর্তীকালে সরকার অনুমোদন করে। এক্ষেত্রে রেলের লোকসান কমাতে পরিচালন ব্যয় যে অনুপাতে বৃদ্ধি পাবে, সে অনুপাতে ভাড়া বৃদ্ধির শর্ত ছিল।

ওই পলিসির আওতায় ২০১৬ সালে একবার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। সে সময় যাত্রী ভাড়া পাঁচ শতাংশ এবং পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনে ১০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া ২০১২ সালেও রেলের বিভিন্ন রুটে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০