এম ইদ্রিছ আলী, ময়মনসিংহ : লবণের দাম বেশি, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহ, সেইসঙ্গে বাজারে ক্রেতাসমাগম তেমন একটা না থাকায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের ব্যবসায়ীরা। দু-একজন ট্যানারি মালিক ও সাধারণ ব্যবসায়ী বাজারে এলেও দাম বলছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কম। ফলে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়ার আতঙ্কে আছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঈদের বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তারা।
ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ চামড়া বাজারের ইজারাদার আহসান হাবীব জানান, দেশের বৃহত্তম চামড়ার বাজারগুলোর অন্যতম ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ চামড়ার বাজার। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলা ছাড়াও সিলেট বিভাগের অনেক জেলা থেকে পাইকার ও ফরিয়ারা চামড়া বিক্রির জন্য আসেন এই বাজারে। প্রতি কোরবানি ঈদে কয়েক লাখ গরু-ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হয় এখানে। আর এই এলাকায় পাঁচ শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা এখানে চামড়া কেনাবেচা করেন। তিনি আরও জানান, বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের থাকা-খাওয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি গরুর চামড়াপ্রতি খাজনা ৩০ টাকা এবং ছাগলের ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
ত্রিশাল উপজেলা থেকে আসা চামড়া বিক্রেতা নারায়ণ চন্দ্র দাস জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ বছর সুদে টাকা নিয়ে ২০ লাখ টাকার চামড়া কিনেছেন। চামড়া কম দামে কিনলেও লবণের দাম এবং যাতায়াত ভাড়া বেশি হওয়ায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চামড়াপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা কম বলছেন পাইকাররা। ঋণের বোঝা কিছুটা হালকা করতে বাধ্য হয়েই কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে।
শেরপুর থেকে আসা চামড়া বিক্রেতা মজিবুর রহমান জানান, প্রতিটি চামড়া কেনার পর লেগে থাকা মাংস ছাড়ানো জন্য খরচ হয় ১০০ টাকা, লবণ ১৫০ টাকা, জমা দিতে হয় ৬০ টাকা, এছাড়া রয়েছে যাতায়াত ভাড়া। এতে ৮০০ টাকার চামড়ায় খরচ পড়ে প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু বাজারে এলে পাইকাররা তার দাম বলছেন ৬০০-৭০০ টাকা। এই অবস্থায় চামড়া কিনে এবার বড় বিপদেই পড়ছেন তিনি।
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা থেকে চামড়া কিনতে আসা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম মানিক জানান, চামড়ার গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে তার দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের ক্রয় করা চামড়ায় অনেক সমস্যা থাকে, তাই সেগুলোর দামও কম। ভালো চামড়া ভালো দামেই বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা থেকে চামড়া কিনতে আসা সুপার এক্স লেদারের প্রতিনিধি লিটন হোসেন জানান, তারা প্রায় দুই হাজার চামড়া কেনার টার্গেট নিয়ে শম্ভুগঞ্জ বাজারে এসেছেন। কিন্তু চামড়ার গুণগত মান ভালো না হওয়ায় এক হাজারের মতো চামড়া কিনেছেন। চামড়া ভালো হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারতেন।
রিলায়েন্স ট্যানারির পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকারনির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে চামড়া ক্রয় করেছেন। তাই তারা চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। দাম বেশি হওয়ায় তিনিও চামড়া না কিনে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের লোকসানের কারণ হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কম এবং হাজারীবাগে ট্যানারি হস্তান্তর ঝামেলাকে দায়ী করছেন।
উল্লেখ্য, সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার শম্ভুগঞ্জ চামড়া বাজার বসে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া কেনাবেচা করতে আসেন ব্যবসায়ীরা।
Add Comment