বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড

লোকসান ৬২,৭০৩ কোটি ভর্তুকি ৫৬,৬২২ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কিনে তা কম দামে বিক্রি করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এজন্য প্রতি বছর বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটিকে। এক দশক ধরে এ চিত্র নিয়মিত হয়ে পড়েছে। এতে ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে পিডিবিকে লোকসান গুনতে হয়েছে ৬২ হাজার ৭০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

যদিও এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পিডিবিকে প্রতি বছর প্রচুর ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এক দশকে এ ভর্তুকির পরিমাণ ৫৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, গত সাড়ে সাত বছরে পিডিবিকে বাজেট সহায়তা আকারে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার ২৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এজন্য তিন শতাংশ হারে সুদও দাবি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এ ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য নেই পিডিবির। এজন্য এ ঋণকে ভর্তুকি রূপান্তরে নিয়মিতই চিঠি দিয়ে আসছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সুদও মওকুফের কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। আর আড়াই বছর ধরে পিডিবিকে সরাসরি ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এর পরিমাণ ১৬ হাজার ৩৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০১০-১১ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৪৮ কোটি ৪৫ লাখ ইউনিট। ওই বিদ্যুৎ বিক্রি ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে পিডিবির আয় হয় আট হাজার ১৬০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর বিদ্যুৎ কেনা ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে পিডিবির ব্যয় ছিল ১২ হাজার ৭৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এতে ২০১০-১১ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান দাঁড়ায় চার হাজার ৬২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর এ ঘাটতি মেটাতে ওই অর্থবছর পিডিবিকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয় চার হাজার কোটি টাকা।

এরপর প্রতি অর্থবছরই বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পিডিবির আয় ও ব্যয়। ফলে সংস্থাটির লোকসানও বেড়েছে। পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকিও বেড়েছে এ খাতে। এর মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৩২৭ কোটি ৫৫ লাখ ইউনিট।

ওই বিদ্যুৎ বিক্রি ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে ওই অর্থবছর পিডিবির আয় হয় ১২ হাজার কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর বিদ্যুৎ কেনা ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে ওই সময় পিডিবির ব্যয় দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬৯৪ কোটি এক লাখ টাকা। এতে ২০১১-১২ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর এ ঘাটতি মেটাতে ওই অর্থবছর পিডিবিকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয় ছয় হাজার ৩৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৬৪৮ কোটি ২২ লাখ ইউনিট। আর ওই অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১৬ হাজার ৮৮২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ও ২১ হাজার ৯২৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর এ ঘাটতি মেটাতে ওই অর্থবছর পিডিবিকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয় চার হাজার ৪০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

পরের অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও শুরু করে বাংলাদেশ। এতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে সরবরাহের পরিমাণ ছিল চার হাজার ২১ কোটি ৪২ লাখ ইউনিট। ওই অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১৯ হাজার ৪২৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ও ২৬ হাজার ২৩৮ কোটি এক লাখ টাকা। এতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮০৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর এ ঘাটতি মেটাতে ওই অর্থবছর পিডিবিকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয় পাঁচ হাজার ৯৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৩৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ইউনিট। ওই অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ২১ হাজার ১৮৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ও ২৮ হাজার ৪৭০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান আরও বেড়ে দাঁড়ায় সাত হাজার ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর এ লোকসান ছাড়াও আগের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে ওই অর্থবছর পিডিবিকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয় ৯ হাজার ১৮৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।

পরের (২০১৫-১৬) অর্থবছর পিডিবির আয় তুলনামূলকভাবে বাড়লেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমে আসে। এতে সংস্থাটির লোকসানও অনেকটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৭৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর পিডিবিকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয় দুই হাজার ৭৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছর পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৯ কোটি ৩৩ লাখ ইউনিট। আরও ওই অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ২৫ হাজার ৩২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও ২৯ হাজার ১৯৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছর পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৫৩৮ কোটি ৪৯ লাখ ইউনিট। আরও ওই অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ২৮ হাজার ২৯৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ও ৩২ হাজার ৭৩০ কোটি ১১ লাখ টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসানও কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৪৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর পিডিবিকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয় তিন হাজার ৯৯৪ কোটি এক লাখ টাকা।

এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরুর কয়েক মাস বিদ্যুৎ খাতে বাজেট সহায়তা তথা ঋণ দেয় সরকার। তবে ওই অর্থবছরের শেষার্ধ থেকে সরাসরি ভর্তুকি দেওয়া শুরু হয়। ওই অর্থবছর এর দুইয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে তিন হাজার ৫৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ও ৯৫৬ কোটি ২০ লাখ। অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ ছিল চার হাজার ৫০৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যদিও ওই অর্থবছর পিডিবি রেকর্ড পরিমাণ লোকসানের সম্মুখীন হয়, যার পরিমাণ ছিল আট হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মূল কারণ ছিল ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়।

তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার আট কোটি ৯৪ লাখ ইউনিট। আর ওই অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৩০ হাজার ৬০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ও ৩৮ হাজার ৯৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৫১ কোটি পাঁচ লাখ ইউনিট। আর ওই অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৩৪ হাজার ৫০৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ও ৪২ হাজার ৬৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসানও কিছুটা কমে দাঁড়ায় আট হাজার ১৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এটি ছিল পিডিবির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসানের পরিমাণ। আর ওই অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেওয়া হয় সাত হাজার ৯৬৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

আর ২০১৯-২০ অর্থবছর পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৯৪১ কোটি ১৫ লাখ ইউনিট। আর গত অর্থবছর পিডিবির আয় ও ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৫ হাজার ৫৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও ৪২ হাজার ৯৮৪ কোটি তিন লাখ টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসান কমে দাঁড়ায় সাত হাজার ৪৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এটি ছিল পিডিবির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ লোকসানের পরিমাণ। আর গত অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে সাত হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০