Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:52 am

লোডশেডিংয়ের প্রভাবে দাম ও বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ 

হামিদুর রহমান : দেশে যখন টানা লোডশেডিংয়ে মানুষের নাভিশ্বাস চলছে, ঠিক তখনই আইপিএস ও জেনারেটরের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলসি জটিলতায় আমদানি করা যাচ্ছে না। যার ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর ক্রেতারা বলছেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী লোডশেডিংকে পুঁজি করে মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

দেশের সর্ববৃহৎ আইপিএস ও জেনারেটরের বাজার রাজধানীর নবাবপুর রোড মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে হোন্ডা ব্র্যান্ডের দুই কিলোওয়াট জেনারেটরের দাম প্রায় ৩৬ হাজার টাকা, যেটি এক বছর আগেও ছিল ২৪ থেকে ২৬ হাজার টাকা। বর্তমানে হোন্ডা ব্র্যান্ডের ৩ কিলোওয়াট জেনারেটরের দাম প্রায় ৪২ হাজার টাকা, যেটি আগে ছিল ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। বর্তমানে হোন্ডা ব্র্যান্ডের ৫ কিলোওয়াট জেনারেটরের দাম প্রায় ৭২ হাজার টাকা। যেটি আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকায়।

একই অবস্থা অন্যান্য ব্র্যান্ডের জেনারেটরেও। বর্তমানে টাইগার ব্র্যান্ডের ২ কিলোওয়াটের একটি জেনারেটরের দাম প্রায় ২৯ হাজার টাকা। আগে যেটি ছিল প্রায় ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে টাইগার ব্র্যান্ডের ৩ কিলোওয়াটের জেনারেটরের দাম প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। যেটি আগে ছিল প্রায় ২৬ হাজার টাকা। বর্তমানে টাইগার ব্র্যান্ডের ৫ কিলোওয়াটের একটি জেনারেটরের দাম প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। আগে যেটি ছিল ৪৮-৫০ হাজার টাকা।

এদিকে একই অবস্থা রয়েছে আইপিএসের ক্ষেত্রেও। গরমে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি কোম্পানির আইপিএস ও ব্যাটারির দাম বাড়ছে। বাজারের তথ্যমতে, বর্তমানে লুমিনাসের একটি ১০৫০ ভিএ আইপিএসের দাম রাখা হচ্ছে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটির দাম ছিল ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। লুমিনাসের ১৬৫০ ভিএ আইপিএসের বর্তমান দাম প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আগে যেটি ছিল ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। একই অবস্থা অন্যান্য কোম্পানির আইপিএসের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে মাইক্রোটেক ১০৫০ ভিএ আইপিএসের দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটির দাম ছিল ৭  থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে রহিমাআফরোজের ২০০ এমপিআরের একটি ব্যাটারির দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ টাকা। যেটি আগে ছিল ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে হেমকো ব্র্যান্ডের ২০০ এমপিআর একটি ব্যাটারির দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটি ছিল ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। বর্তমানে ভলভো ব্র্যান্ডের ২০০ এমপিআরের একটি ব্যাটারির দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটি বিক্রি হতো ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়।  

দেশের সর্ববৃহৎ রাজধানীর নবাবপুর রোড মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেনারেটর ক্রয় করছেন ক্রেতারা। মসজিদ-মাদরাসা, বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে করপোরেট অফিসের জন্য ক্রয় করছে বিভিন্ন কিলো ভোল্টের জেনারেটর ও আইপিএস। সব কিলো ভোল্টের জেনারেটরের চাহিদা বেড়েছে। তবে ৩ থেকে ৫ কিলো ভোল্ট জেনারেটরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।   

কাঁচপুর থেকে একটি মাদ্রাসা জেনারেটর কিনতে এসেছেন মুফতি মো. আব্দুল্লাহ ও মো. আব্দুল হালিম। তাদের সঙ্গে কথা হলে জানান, বর্তমানে লোডশেডিংয়ের সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। এখন তো বিদ্যুৎ থাকেই না। হারিকেন বা চার্জার লাইট দিয়ে ছাত্রদের পড়াতে হচ্ছে।  এভাবে ছাত্রদের পড়তে খুব অসুবিধা হয়। মানুষের সহযোগিতায় ৩ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটর কিনতে এসেছি। কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখছি, দাম অনেক বেড়ে গেছে। ৩ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটর কিনেছি ৪২ হাজার ৫০০ টাকায়। 

তবে চাহিদা বাড়ায় বাজারে কিছু দোকানি নকল ব্র্যান্ডের জেনারেটর বেশি ভোল্ট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে না দিয়ে তা স্বীকারও করেছেন কিছু দোকানি।

নবাবপুর রোডে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কিছু কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ব্র্যান্ড নকল করে কিলো বেশি দেখিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করেন। এতে গ্রাহকদের বাজে অভিজ্ঞতা হয়। গ্রাহকদেরই সচেতন হতে হবে। যেমন দেশে এখন জাপানের অরিজিনাল হোন্ডায় এর কোনো জেনারেটর আমদানি হচ্ছে না। কিন্তু বাজারে ঠিকই নকল হোন্ডার জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে।     

ইভা এন্টারপ্রাইজের মো. মাসুম শেয়ার বিজকে জানান, বাজারে জেনারেটরের চাহিদা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে গেছে। প্রায় কয়েকগুণ চাহিদা বেড়েছে। আগে যেসব দোকানে সারা মাসে ২০-৩০টি জেনারেটর বিক্রি হতো, সেখানে এখন ১০০টির বেশি জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রায়ই জেনারেটরের সংকটে পড়তে হচ্ছে।

নবাবপুর রোডের কামাল মেশিনারিজ অ্যান্ড টুলসের প্রোপ্রাইটর কামাল হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমানে জেনারেটরের মার্কেট বেশ ভালো। অতীতে কখনও এভাবে

 জেনারেটর বিক্রি হতো না। প্রতিদিন অনেক গ্রাহক আসছেন সারাদেশ থেকে। আগে ব্র্যান্ড থেকে ৫ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটরের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কয়েকটি কারণে মূলত জেনারেটরের দাম বেড়ে গেছে। একদিকে লোডশেডিং বেড়ে গেছে, অন্যদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, পোর্টে ব্যয় বেড়ে গেছে, আবার চাহিদার কারণেও কিছুটা দাম বেড়ে গেছে।’

রাজধানীর বনশ্রীর অধিবাসী কামাল মির্জা। পেশায় ব্যাংকার। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিনের বিদ্যুতের সমস্যায় অতিষ্ঠ। বাসায় ছোট বাচ্চা। উপায় না পেয়ে একটি আইপিএস কিনলাম। ব্যাটারি আর আইপিএস মিলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হলো।’

গরমের উত্তাপ শরীরেও যেমন, বাজারেও তেমন। আমরা বড়রা সহ্য করতে পারলেও ছোট বাচ্চা আর বয়স্কদের জন্য খুব কষ্টের। বাসায় তিন বছরের ছোট মেয়ে। দিনের মধ্যে তিন-চারবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। বাধ্য হয়ে ফ্যান কিনতে এসেছি। ফ্যানের দাম অনেক বেশি। তবুও নিতে হচ্ছে। এভাবেই শেয়ার বিজের সঙ্গে গরমের অভিজ্ঞতা জানালেন ইস্কাটনের অধিবাসী, বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী মোরশেদ।

তার সঙ্গে কথা বলার সময় যোগ হন আরেক ক্রেতা বাসাবোর মিজানুর রহমান। পেশায় ব্যাংকার। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বছর প্রথম থেকেই বিদ্যুতের সমস্যা শুরু হয়েছে, বাসায় বাচ্চাদের পাশাপাশি বৃদ্ধদের ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। ঘরে বাচ্চারা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এসি রেখেও লাভ নেই। বিদ্যুৎ না থাকলেও সবকিছুই অচল। তাই গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে আইপিএস কিনতে এসেছি।’