হামিদুর রহমান: দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের প্রভাবে জেনারেটরের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এ সুযোগে দামও বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানিকৃত প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে জেনারেটরের বাজারেও।
রাজধানীর নবাবপুর রোড মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতারা জেনারেটর কিনছেন। দেশের সর্ববৃহৎ এ মার্কেটে মসজিদ-মাদরাসা, বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে করপোরেট অফিসের জন্য বিভিন্ন কিলো ভোল্টের জেনারেটর পাওয়া যায়। সব কিলো ভোল্টের জেনারেটরের চাহিদা বেড়েছে। তবে ৩ থেকে ৫ কিলো ভোল্ট জেনারেটরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
চাঁদপুর থেকে একটি মাদরাসার জন্য জেনারেটর কিনতে এসেছেন মুফতি মো. আবু সালেহ ও মো. আব্দুল ওয়াহাব। তাদের সঙ্গে কথা হলে জানান, গ্রামে আগে থেকে বিদ্যুৎ কম থাকত। এখন তো বিদ্যুৎ থাকেই না। হারিকেন বা চার্জার লাইট দিয়ে পড়তে হয়। এভাবে মাদরাসা ছাত্রদের পড়তে অসুবিধা হচ্ছে দেখে গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় ৩ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটর কিনতে এসেছি। কয়েকটি দোকান ঘুরে ঘুরে দেখছি। দাম অনেক বেড়ে গেছে। ৩ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে ৩৬ হাজার টাকায়, আগে যার দাম ছিল ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
রাজধানীর বেইলি রোডের বাসিন্দা মুসাব্বির রহমান। পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আগে বিদ্যুৎ তো খুব একটা যেত না। তবে বর্তমান সময়ে লোডশেডিং বাড়ছে। গ্রামে বিদ্যুতের অভিজ্ঞতা খুব বাজে। ৩ কিলো ভোল্টের দুটি জেনারেটর দরকারÑঢাকার বাসার জন্য একটা ও গ্রামের বাড়ির জন্য একটা। বাসায় আইপিএস রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই সমস্যা হয়। জেনারেটর হলে সমস্যা তুলনামূলক কম। সার্ভিস ব্যাকআপÑদুটোই ভালো। গ্রামে আইপিএসের কাজ নেই। কারণ বিদ্যুৎ থাকে না, আইপিএস চার্জ হওয়ার আগে বিদ্যুৎ চলে যায়। তবে দাম অনেক বেড়ে গেছে।’
তবে বাজারে জেনারেটরের চাহিদা বাড়ার সুযোগে কিছু দোকানি ব্র্যান্ড নকল করছে। অন্যদিকে কম কিলো ভোল্টের জেনারেটর বেশি ভোল্ট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ করছেন অনেক গ্রাহক। আবার এসব অভিযোগ উড়িয়ে না দিয়ে তা স্বীকারও করেছেন কয়েকজন দোকানি।
নবাবপুর রোডে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ব্র্যান্ড নকল করে কিলো বেশি দেখিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করেন। এতে গ্রাহকদের বাজে অভিজ্ঞতা হয়। তারা আস্থাহীনতায় ভোগেন। গ্রাহকদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। যেমন দেশে এখন জাপানের অরিজিনাল হোন্ডায় এর কোনো জেনারেটর আমদানি হচ্ছে না। কিন্তু বাজারে ঠিকই নকল হোন্ডার জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে।
ইভা এন্টারপ্রাইজের মো. মাসুম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাজারে জেনারেটরের চাহিদা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে গেছে। প্রায় ৫ থেকে ৬ গুণ চাহিদা বেড়েছে। আগে যে সব দোকানে সারা মাসে ২০ থেকে ৩০টি জেনারেটর বিক্রি হতো, সেখানে এখন ১০০টির বেশি জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রায়ই জেনারেটরের সংকটে পড়তে হচ্ছে।’
নবাবপুর রোডের কামাল মেশিনারিজ অ্যান্ড টুলসের প্রোপ্রাইটার কামাল হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমানে জেনারেটরের মার্কেট বেশ ভালো। অতীতে কখনও এভাবে জেনারেটর বিক্রি হতো না। প্রতিদিন অনেক গ্রাহক আসছেন সারাদেশ থেকে। আগে ব্র্যান্ড থেকে ৫ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটরের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। আবার ২০ কিলো ভোল্টের যে জেনারেটর আগে বিক্রি হতো দেড় থেকে ২ লাখ টাকায়, তা এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ টাকায়। কয়েকটি কারণে মূলত জেনারেটরের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, পোর্টে ব্যয় বেড়ে গেছে, আবার চাহিদার কারণেও দাম বেড়ে গেছে।’