লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আনতে ব্যবস্থা নিন

দেশব্যাপী লোডশেডিং ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। গতকাল শেয়ার বিজে ‘দিনে মুক্তি নেই, মধ্যরাতে সর্বোচ্চ লোডশেডিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জনদুর্ভোগকারী কিছু তথ্য এসেছে, যা সত্যিই দুঃখজনক।

রাজধানী ছাড়া দেশের সবখানেই অসহনীয় লোডশেডিং চলছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য পর্যালোচনা করে আমাদের প্রতিবেদক দেখিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে। গত কয়েক দিন মধ্যরাতে বিশেষত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ লোডশেডিং হচ্ছে। সারাদিন গড়ে হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলছে না। এতে মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে দেশ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। সরকার তার দল ও বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার করতে ২০১০ সাল থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোনো দরপত্র ডাকেনি। এর ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সর্বত্র লুটেরা-মাফিয়া গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারে দায়মুক্তি আইন করে সবাইকে জবাবদিহির বাইরে রাখা হয়েছে।

প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সভ্য জগতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া এক মুহূর্তও স্বস্তিতে থাকার বিষয় কল্পনাও করা যায় না। বিশ্বের সব দেশই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। গুরুত্ব বিবেচনায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

দেশে প্রয়োজনের তুলনায় এখন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বিদ্যমান চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও এখনও বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকায় এখন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে, তবু লোডশেডিং। এটি কীসের সঙ্গে তুলনীয়, আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।

সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। লক্ষণীয়, উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এখন চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় ব্যবধান বিদ্যমান, রয়েছে অবকাঠামো দুর্বলতাও।

বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে বারবার উচ্চমূল্যের ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নবায়ন এবং কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমান সরকারের সাফল্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই সাফল্যের জন্য রাষ্ট্র তথা জনগণকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামীয় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বোঝা টানতে হচ্ছে। ২০২২ সালের ২১ মার্চ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। পাশাপাশি লোডশেডিংও বাড়ছে।

বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করি। গ্রিড-অফগ্রিড মিলিয়ে যেখানে দেশের সব এলাকা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়, সেখানে দেশের বড় এলাকায় বিদ্যুৎবিভ্রাটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, এটি কাম্য নয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে মন্ত্রণালয়, পিডিবি, আরইবি, পাওয়ার সেল এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। উৎপাদন ও বিতরণের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করা গেলে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০