নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে কমানো হতে পারে সরকারি অফিস-আদালতের সময়। কভিড মহামারির সময়ের মতো আবার চালু হতে পারে হোম অফিস। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। সারাদেশে বন্ধ করা হবে আলোকসজ্জা। এখন দেশজুড়ে যে লোডশেডিং চলছে, তা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এ কথা বলেন। সারাদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা হয়।
তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, লোডশেডিং স্বাভাবিক হতে আরও আড়াই মাস লাগবে। সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। ওই সময় বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। কোথায় কত ঘণ্টা লোডশেডিং করা হবে, সেটি আগাম জানানোর যে দাবি উঠেছে, তা বাস্তবায়ন কঠিন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টার দুই পাশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। পর্যালোচনা বৈঠকে পেট্রোবাংলা, বাপেক্স, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ে বৈঠকে বেশ কিছু পরামর্শ উঠে এসেছে। এসব পরামর্শ আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি অফিসের সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত করা, বিয়ের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার ওপরে রাখা। আলোকসজ্জা করা যাবে না। রাত ৮টার মধ্যে শপিংমল বন্ধ করা। ঘরে বসে কাজ করা যায় কি না, সে বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মসজিদ-মন্দিরে বিদ্যুৎ ও এসি ব্যবহার কমিয়ে আনা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে বিদ্যুতের চাহিদা ৫০০ মেগাওয়াট কমে আসবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। লোডশেডিং হবে না।’
সেপ্টেম্বরের মধ্যে কীভাবে জ্বালানি-সংকট কমে আসবে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, ওই সময়ের মধ্যে আদানি থেকে কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ও পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তখন লোডশেডিং কমে আসবে।
জ্বালানি খাতে সরকারের আমদানিনির্ভরতার কারণেই চলমান সংকট কি না, তা জানতে চাইলে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, যারা এ কথা বলছেন, তারা ঠিক বলছেন না। কারণ স্থানীয়ভাবে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, তখন গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৮০০ এমএমসি। সেটি ১ হাজার ৬৪৪ এমএমসি বেড়েছে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে আরও নতুন কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে। পেট্রোবাংলা গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, জাপানের মতো দেশে লোডশেডিং হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের সব উন্নত দেশে জ্বালানি-সংকটের অভিঘাত পড়েছে। তাদের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে আছে। তবু আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। কোন এলাকায় কত ঘণ্টা লোডশেডিং হবে, তা আগাম জানানো যাবে কি না, সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, কোন এলাকায় কত ঘণ্টা লোডশেডিং করা হবে, তার জন্য ডিপিডিসি একটি অ্যাপ তৈরি করছে। এটা এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। অ্যাপটি হয়ে গেলে কর্মকর্তারা সেখানে ঢুকে জানতে পারবেন। তবে সাধারণ মানুষকে তাৎক্ষণিক এ তথ্য জানানো কঠিন হবে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগ ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার অনেকের বকেয়া বিল পড়ে আছে। অবৈধ গ্যাস-সংযোগের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। যাদের বিল বকেয়া আছে, সে টাকা আদায়ে কঠোর হবে সরকার। জ্বালানি সাশ্রয় করলে চাহিদা কত কমে আসবেÑএমন প্রশ্নের জবাবে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা থাকতে পারে। অফিস-আদালতের সময় কমিয়ে আনলে, আলোকসজ্জা বন্ধ হলে চাহিদা কমে ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে নেমে আসবে। সবাই সাশ্রয়ী হলে লোডশেডিং কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।