Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 5:28 am

লোড ক্যাপাসিটির ভোগান্তিতে যশোরের ৪৬ হাজার গ্রাহক

প্রতিনিধি, যশোর: প্রি-পেইড মিটার নিয়ে ঝামেলা যেন পিছু ছাড়ছে না যশোরের বিদ্যুৎ গ্রাহকের। পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ হঠাৎই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ অফিস থেকে বলা হচ্ছে লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) এর জন্য এমনটি হচ্ছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) যশোরের আওতায় জেলার ৪৬ হাজার গ্রাহকই এখন এ ঝামেলায় পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ বলছে, এতদিন এই বিধি পালনে কর্তৃপক্ষ নজর না দিলেও এখন কড়াকড়ি আরোপের ফলে বিষয়টি গ্রাহকদের কাছে নতুন মনে হচ্ছে। তবে শুধু ডিজিটাল প্রি-পেইড মিটারের ক্ষেত্রে নয়, অ্যানালগ মিটারের গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করতে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (ওজোপাডিকো) যশোরের বিক্রয় বিতরণ বিভাগ ১ ও ২ এর আওতায় যশোর শহর ও তার আশপাশে ৪৬ হাজার গ্রাহককের বাসা ও অন্যান্য স্থাপনার অ্যানালগ মিটার পরিবর্তন করে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়। গ্রাহকরাও অনেকটা আগ্রহ নিয়ে আগের মিটার পরিবর্তন করে ডিজিটাল মিটার সংযোজন করে। তবে ডিজিটাল এ মিটার সংযোজনের শুরুতেই গ্রাহকরা ব্যালেন্স রিচার্জের ঝামেলা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। অনেকে মিটার পরিবর্তন করে আগের মিটারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারেও বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে গত প্রায় এক মাস ধরে নতুন করে লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন জটিলতায় ভোগান্তিতে ফেলেছে এসব গ্রাহকদের।

শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আখতারুজ্জামান বলেন, প্রি-পেইড মিটার এখন যেন ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। অ্যানালগ মিটার থেকে প্রি-পেইড মিটারে ফিরে গিয়ে বিড়ম্বনার শেষ হচ্ছে না। তিনি বলেন, একেতো প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জ টাকা ঢোকাতে গিয়ে প্রায়ই সময় ঝামেলায় পড়তে হয়। এরই মধ্যে বাসায় হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফ্রিজ চালানো অবস্থায় পানির পাম্পের সøুইচ দিলেই বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা লোড ক্যাপাসিটি বাড়ানোর কথা বলছে।

একই কথা বলেন, কাজীপাড়া এলাকার রুকাইয়া বেগম নামে আরেক গৃহিণী। তিনি বলেন, বুধবার থেকে আমার বাসায় হঠাৎ হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলার পর পরদিন বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে সমস্যার কথা জানালে তারা জানান, লোড ক্যাপাসিটির চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার কারণে এ পরিস্থিতি হচ্ছে। পরে ৪০৩ টাকা দিয়ে লোড ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে নেয়া হয়। তিনি বলেন, এখন সুযোগ থাকলে তিনি আগের অ্যানালগ পদ্ধতিতে ফিরে যেতেন।

শহরের মুজিব সড়ক এলাকার ওজোপাডিকোর আরেকজন গ্রাহক বলেন, তার বাসাতেও একই অবস্থা হওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছেন এখন থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য মাসে ৩৫ টাকা করে সেবা কর দিতে হবে। এটি বিদ্যুৎ বিভাগের নতুন করে গ্রাহকের পকেট কাটার কৌশল বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় আমাদের কী করণীয় তা ভেবে উঠতে পারছি না বলে তিনি আক্ষেপ করেন।

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো যশোর বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন বলেন, ওজোপাডিকো যশোরের দুটি জোনে মোট ৪৬ হাজার প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের মধ্যে থেকে প্রতিদিন দেড়শরও বেশি গ্রাহক আমাদের অফিসে তাদের বাসা ও স্থাপনায় বাড়তি লোড ক্যাপাসিটি সংযোজনের জন্য আবেদন করছেন। সামনে আরও বাড়তে পারে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, লোড ক্যাপাসিটির এ বিষয়টি সব সময়ই বলবৎ ছিল। ডিজিটাল মিটারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অটো বন্ধ হয়ে যায় বলে গ্রাহকরা এটিকে বিড়ম্বনা মনে করছেন। তবে এর বাইরে অ্যানালগ মিটারে যেহেতু লোড ক্যাপাসিটির ঘাটতি হলে বিদ্যুৎ বন্ধের কোনো অপশন নেই, সে কারণে ওইসব গ্রাহকের মাসিক বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে এসব লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন সমন্বয় করা হয়।