লোহিত সাগরে হুতিদের সামলাতে ইরানকে চাপ চীনের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: লোহিত সাগরে হুতিদের হামলার লাগাম টেনে ধরতে ইরানকে চাপ দিয়েছে চীন। তা না হলে বেইজিংয়ের সঙ্গে তেহরানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে। এর আগে হুতিদের হামলা বন্ধে ইরানকে রাজি করাতে চীনের দ্বারস্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের জাহাজে হামলার লাগাম টেনে ধরতে বা বেইজিংয়ের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকি নিতে ইরানি কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন চীনা কর্মকর্তারা।

লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। বিপরীতে এ গোষ্ঠীর অবস্থানগুলোতে দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে বন্ধ হয়নি হামলা।

রয়টার্স বলছে, লোহিত সাগরে একের পর এক জাহাজে হামলা এবং চীন ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে বেইজিং ও তেহরানে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক ও সেখানে হওয়া আলোচনার বিষয়ে জানেন এমন এক ইরানি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘মূলত, চীন বলেছে, ‘আমাদের স্বার্থ যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা তেহরানের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায় প্রভাব ফেলবে। তাই হুতিদের বলুন সংযত থাকতে।’

গত এক দশক ধরে চীন ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হলেও তাদের সেই বাণিজ্য সম্পর্ক একমুখী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চীনা তেল শোধনাকারীরা গত বছর ইরানের অপরিশোধিত তেলের মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশেরও বেশি কিনেছিল বলে ট্রেড অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপলারের ট্যাঙ্কার ট্র্যাকিং ডেটায় দেখা গেছে।

মূলত ব্যাপক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে অন্যান্য অনেক গ্রাহক ইরানের তেল কেনা থেকে দূরে ছিল। ফলে চীনা সংস্থাগুলো বেশ বড় ডিসকাউন্টে ইরানি তেল কিনে লাভবান হয়।

যদিও চীনের অপরিশোধিত তেল আমদানির মাত্র ১০ শতাংশই পূরণ করতে পারে ইরান। এছাড়া বেইজিংয়ের সরবরাহকারীদের নেটওয়ার্ক বিশ্বের অন্য কোথাও থেকে ঘাটতি পূরণ করতে পারে।

ইরানি সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেইজিং স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে, চীনের সঙ্গে যুক্ত কোনো জাহাজে হামলা করা হলে বা দেশের (চীনের) স্বার্থ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তেহরানের প্রতি খুবই হতাশ হবে বেইজিং।

ইরানের একজন অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি বলেছেন, চীন ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হলেও তেহরান ইয়েমেনের হুতিদের পাশাপাশি গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইরাকেও প্রক্সি রেখে দিয়েছে এবং এর আঞ্চলিক জোট ও অগ্রাধিকারগুলো ইরানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।

লোহিত সাগরে হামলা নিয়ে আলোচনার জন্য ইরানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে: ‘চীন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আন্তরিক বন্ধু এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় তিন মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুতি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে। এর মাঝেই হুতিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে দফায় দফায় মার্কিন হামলা হুতিদের আক্রমণ বন্ধ করতে পারেনি বলে সম্প্রতি স্বীকার করে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এরপরই হুতিদের হামলা বন্ধে ইরানকে রাজি করাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের দ্বারস্থ হয়েছে বলে খবর সামনে আসে।

এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে বৈদেশিক বাণিজ্যে খরচ বেড়েছে বহুগুণ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০