মেহেদী হাসান: ব্র্যাক ব্যাংকের রিকভারি বিভাগ বেশ শক্তিশালী। ঋণ আদায়ে তারা সিদ্ধহস্ত। প্রতিষ্ঠানটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগও বেশ সমৃদ্ধ। এতকিছুর পরও শুধু কম্পিউটার সোর্সের কাছে পাওনা ১০১ কোটি টাকা, যা আদায় করতে পারছে না ব্যাংকটি। ব্র্যাক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ১৪ শতাংশ রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে, যা নিয়ে এখন বিপাকে ব্র্যাক ব্যাংক।
সূত্র জানায়, কম্পিউটার সোর্সের খেলাপি নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বেশ বিব্রত। ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ ঋণ আদায়ের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো কিছুই কাজে আসছে না। কোনো টাকাই আদায় করতে পারছে না ব্যাংকটি। সর্বশেষ অন্য কোনো ব্যাংক থেকে যাতে কম্পিউটার সোর্স ঋণ না পায় সে জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটি।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির কাছে ব্র্যাক ব্যাংকের খেলাপি ঋণে ১৪ শতাংশ আটকে আছে।
সূত্র জানায়, ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণের তুলনায় খেলাপির পরিমাণ কম। কারণ ঋণ আদায়ে তারা সিদ্ধহস্ত। তারপরও একটি প্রতিষ্ঠানে কেন ১০১ কোটি টাকার খেলাপি হলো, তা নিয়ে পর্ষদের কাছে নিয়মিত জবাবদিহি করতে হচ্ছে। এদিকে ঋণ আদায় না হওয়ার ঋণ দানের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।
সম্প্রতি দেশের তফসিলি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে একটি চিঠি পাঠায় ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান ঝুঁকি কর্মকর্তা চৌধুরী আক্তার আসিফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, কম্পিউটার সোর্সের কাছে ব্র্যাক ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ১০১ কোটি ২৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ঋণের এই অর্থ ফেরত দিতে বারবার তাগাদা দিলেও টাকা ফেরত দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী এই ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। তাই ওই প্রতিষ্ঠানকে আর কোনো ঋণ না দেওয়ার জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
কম্পিউটার সোর্সের খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসাইনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে ই-মেইল বার্তায় তিনি জানান, ‘ব্র্যাক ব্যাংক গ্রাহকদের তথ্য গোপন রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে তা প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। যদি না নীতিগত কোনো প্রয়োজন পড়ে।’
কম্পিউটার আমদানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার সোর্স লিমিটেড। ১৯৯৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটার সামগ্রী বাজারজাত শুরুর পর থেকে ভালোই ব্যবসা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২০১৩ সালের দিকে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। কম্পিউটার ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জমি কিনেই সংকটে পড়েছে এ প্রতিষ্ঠান। আর কম্পিউটার সোর্সের কাছে শুধু ব্র্যাক ব্যাংকেরই পাওনা ১০০ কোটি টাকার ওপর। প্রতিষ্ঠানটি দেশের শীর্ষ ১০০ খেলাপির মধ্যে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম্পিউটার ব্যবসার নামে ঋণ নিয়ে সেই টাকায় টাঙ্গাইল, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকশত একর জমি ক্রয় করেছেন কম্পিউটার সোর্সের উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে কম্পিউটার সোর্সের ৪৭টি শোরুমের মধ্যে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং ফেনীসহ ২৫টি বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট শোরুমগুলোও বন্ধের পথে। ১৯৯৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটারসামগ্রী বাজারজাত শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। অনেক বছর ধরে ভালো ব্যবসা করলেও ২০১৩ সালের দিকে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে কম্পিউটার সোর্স।
এ বিষয়ে কম্পিউটার সোর্সের পরিচালক এইউ খান জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, যে কয়েকটি ব্যাংকে আমাদের যে পরিমাণ ঋণ রয়েছে তার চেয়ে বেশি টাকার জমি এসব ব্যাংকে মর্টগেজ (জামিনস্বরূপ সম্পত্তি) রাখা আছে। তবে এই মুহূর্তে আমরা জমি বিক্রি করে টাকা ক্যাশ করতে পারছি না। কেননা, সামনে নির্বাচন। তাই এখন কেউ জমি কিনছে না। এটা অস্বীকার করব না যে, ব্যাংকগুলো আমাদের কাছে টাকা পাবে না। এ ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা চলছে। আমরা এই ঋণ পরিশোধ করে দেব। আশা করি, ব্যাংকগুলোও কিছু ছাড় দেবে।
শতকোটি টাকার খেলাপি নিয়ে বিপাকে ব্র্যাক ব্যাংক
